যাদবপুরের আন্দোলনের আঁচ প্রেসিডেন্সিতে, বাদ গেল না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও। শুক্রবার দুপুরে উত্তরের বইপাড়ার আবহাওয়া ছিল রীতিমতো উত্তপ্ত। মেধা তালিকা প্রকাশের দাবিতে এবং স্নাতক স্তরে কাউন্সেলিং ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অবস্থান বিক্ষোভে বসল এসএফআই। এরপর এসএফআই-এর এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনও প্রতিবাদে সামিল হয়েছে, পাশাপাশি আন্দোলনে যোগ দিয়েছে ‘অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’ (এআইএসএ) এবং 'ইন্ডিপেন্ডেন্টস কন্সলিডেটেড' (আইসি)। আন্দোলনরত পড়ুয়ারা এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, কন্ট্রোলার এবং রেজিষ্ট্রারকে ঘেরাও করেন। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ফিন্যান্স অফিসারের ঘরেও।
তাঁদের মূল দাবি, অবিলম্বে কাউন্সেলিং ফি ৫০০ টাকা থেকে কমাতে হবে। পাশাপাশি র্যাঙ্ক কার্ডের বদলে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের মেধা তালিকা প্রকাশ্যেই জানাতে হবে। তাঁদের কথায়, কে কত নম্বর পেয়ে ভর্তি হচ্ছেন জানা যাচ্ছে না। মেধা তালিকা প্রকাশ করা হলে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে। এতে দূর থেকে যে পড়ুয়ারা আসেন তাঁদের সুবিধে হবে। পাশাপাশি কাউন্সেলিংয়ের জন্য প্রত্যেকেই টাকা জমা দিচ্ছেন, কিন্তু সবাই ভর্তি হতে পারবেন না। যাঁরা ভর্তি হতে পারবেন না, তাঁদের থেকে কেন টাকা নেওয়া হচ্ছে, এই প্রশ্ন করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে উত্তর মেলেনি বলেই অভিযোগ পড়ুয়াদের। যতক্ষণ না তাঁদের দাবি মানা হচ্ছে ততক্ষণ স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের পড়ুয়ারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেই জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Jadavpur entrance exam: প্রবেশিকার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়েরই, প্রকাশ হলো নির্ঘণ্ট
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার জানান, কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার দায়িত্বভার রয়েছে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের ওপর। তারাই তাদের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর ফি নির্ধারণ করে, এবারও তাই করেছে। সুতরাং প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কিছু করতে পারেন না। দেবজ্যোতিবাবু আরও বলেন, "যদিও ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্সি থেকে কাউন্সেলিং ফি কমানোর আবেদন জানানো হয়েছে বোর্ডের কাছে, তারা জানিয়েছে চলতি বছরে কোনও সিদ্ধান্ত বদলানো সম্ভব নয়, পরের বছরই নতুন করে ফি নির্ধারণের আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।"
এ তো গেল একটা দিক। আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছে আরেকদিকেও। এদিন দীনবন্ধু সান্ধ্য কলেজের বি কম কোর্সের ছাত্রছাত্রী এবং তাঁদের অভিভাবকরা জমায়েত হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। তাঁদের অভিযোগ, মেধাতালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কাউন্সেলিং-এ ভর্তি হতে পারেননি অনেকেই। কারণ এর আগেই স্থানীয় নেতা এবং ছাত্র নেতারা যৌথভাবে টাকা নিয়ে কলেজের আসন ভরিয়ে ফেলেছেন। কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রথমে সদুত্তর পাননি ছাত্রছাত্রীরা, এবং বিক্ষোভের পর কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয়বার কাউন্সেলিং-এর আয়োজন করলেও তাতে সুরাহা হয়নি। শেষে বাধ্য হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে আসেন তাঁরা। এদিন একটি চিঠিও জমা দেওয়া হয়েছে উপাচার্যের কাছে। সোমবারের পর বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দেখেশুনে মনে হয়, রীতিমতো রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে শহরের শিক্ষাক্ষেত্র। ইতিমধ্যেই কলেজগুলির ভর্তি প্রক্রিয়ায় দেখা গিয়েছে চরম অরাজকতা। ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অপরাধে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সরেজমিনে তদন্তে নেমেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। বাদ যাননি শিক্ষামন্ত্রীও। তবে পরিস্থিতির যে তেমন বদল হয়নি এখনও, তার প্রমান মিলল শুক্রবার।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা। #education #ieBangla pic.twitter.com/Nce6rpV1oV
— IE Bangla (@ieBangla) July 13, 2018