সকাল ১০:১৫ ইতিহাসের সাক্ষী থাকল সংসদের সেন্ট্রাল হল। দেশের প্রথম আদিবাসী ও সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান দেশের প্রধান বিচারপতি এনভি রমনা।
১৯৫৮ সালের সালের ২০ শে জুন ওডিশার ময়ূরভঞ্জ জেলার উপরবেদা গ্রামে একটি সাঁওতাল পরিবারে জন্ম দ্রৌপদী মুর্মুর। মুর্মুর যাত্রা অনেকের কাছেই প্রথমের একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প। গ্রামের প্রথম মহিলা হিসাবে কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে সেদিন সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি।
রাজনীতিতে তাঁর কর্মজীবন শুরু করার আগে, মুর্মু রায়রাংপুরের শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টারে একজন শিক্ষক হিসাবে তাঁর দায়িত্ব সামলেছেন। এরপর তিনি ওডিশা সরকারের সেচ ও বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি প্রথম রায়রাংপুর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হন। এরপর ২০০০ সালে ওডিশা বিধানসভায় প্রথম জয় লাভ করে বিজেডি-বিজেপি জোট সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা গভর্নর হিসাবে তিনি দায়িত্ব সামলান।
ভারতের ১৫ তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেওয়ার পরে প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময়, দ্রৌপদী মুর্মু বলেন যে তাঁর এই কৃতিত্ব ভারতের প্রতিটি দরিদ্র মানুষের কৃতিত্ব এবং এটি কোটি কোটি নারীর ক্ষমতার প্রতিফলন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে সেজে উঠেছিল সংসদ চত্ত্বর। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ, উপ-রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিশিষ্ট অতিথিবর্গ।
আরও পড়ুন: <পিছন থেকে সজোরে ধাক্কা, দুমড়ে মুচড়ে গেল ডবল ডেকার বাস! দুর্ঘটনার বলি ৮>
একনজরে দেখে নেওয়া যাক জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে কী বললেন দ্রৌপদী মুর্মু:
🔴 তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, স্বাধীনতার ৭৫ তম বছরে দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পেয়ে আমি সম্মানিত”। তিনি যোগ করেন “স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণকারী আমিই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি”। আমি একটি ঐতিহাসিক সময়ে এই দায়িত্ব নিতে পেরে সম্মানিত। এমন এক সময়ে আমি এই দায়িত্ব পেলাম যখন ভারত আগামী ২৫ বছরের স্বপ্ন পূরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
🔴 তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য আমি সমস্ত সাংসদ এবং বিধানসভার সমস্ত সদস্যদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনার একটি ভোট দেশের কোটি কোটি নাগরিকের বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।
🔴 সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আরও বলেন, “ রাষ্ট্রপতি পদে পৌঁছানো আমার ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, এটি ভারতের প্রতিটি দরিদ্রে মানুষের কৃতিত্ব। আমার মনোনয়ন প্রমাণ করে যে ভারতের দরিদ্ররা কেবল স্বপ্ন দেখতে নয়, সেই স্বপ্নগুলিও পূরণ করতে পারে,”। এছাড়াও, নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, “আমি চাই মহিলারা আরও ক্ষমতার অধিকারী হোন, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলারা তাদের অবদান ক্রমশই বাড়িয়ে তুলছে”।
🔴 কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে তিনি বলেন, “গরীব ঘরে জন্ম নেওয়া মেয়ে, প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকায় জন্ম নেওয়া এক মেয়ে ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে পৌঁছাতে পারে এটাই আমাদের গণতন্ত্রের শক্তি।
🔴 তিনি তাঁর ভাষণে বলেন , “আমি সমস্ত দেশবাসীকে, বিশেষ করে ভারতের যুবক ও মহিলাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে এই পদে কাজ করার সময়, তাদের স্বার্থ আমার কাছে সর্বাগ্রে বিবেচিত হবে”। সংসদীয় গণতন্ত্রের ৭৫ বছরে, ভারত ঐক্যমতের মাধ্যমে অগ্রগতির সংকল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এখন দেশ আগামী ২৫ বছরের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে”।
🔴 ২৬ জুলাই কার্গিল দিবস উপলক্ষে দেশের সেনাবাহিনীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন , “মঙ্গলবার ২৬ জুলাই কার্গিল বিজয় দিবস। দিনটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীরত্বের প্রতীক। আমি কার্গিল বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং দেশের সকল নাগরিককে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি”।