নিউ ইয়র্ক টাইমসের চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনের পর পেগাসাস নিয়ে ফের একবার উত্তাল দেশ। এবার এই বিতর্কে কেন্দ্রের অস্বস্তি আরও বাড়ালেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটির সামনে চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি দুই সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষকের। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রযুক্তিগত নানা দিক খতিয়ে দেখে তাঁরা পিটিশনকারীদের ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন।
এই সাইবার-নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষকদের পেগাসাস স্পাইওয়্যারের ব্যবহার খতিয়ে দেখতেই নিয়োগ করা হয়েছিল। বেশ কয়েকজন আবেদনকারীর হয়ে তাঁরা কাজ করেছেন। শীর্ষ আদালতের প্যানেলের সামনে তাঁদেরই জবানবন্দি দেওয়ার কথা। সাইবার-নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষকদের ফরেনসিক বিশ্লেষণও বিশদে আদালতে জমা দিতে হবে।
এক সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ''সাত জনের আইফোন অ্যানালাইসিস করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, দু'জনের ফোনেই পেগাসাস ব্যবহার হয়েছে।'' ওই গবেষক সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা জমা দিয়েছেন। দুই ব্যক্তির ডিভাইস থেকে ব্যক্তিগতভাবে শনাক্তযোগ্য ডেটা মুছে ফেলা হয় বলে তাঁর দাবি। সাইবার নিরাপত্তা গবেষক জানিয়েছেন, একজনের ফোন ২০১৮-এর এপ্রিলে পেগাসাস হামলার শিকার হয়। অন্য ফোনটিতে একাধিকবার পেগাসাস হানা দেয়।
২০২১-এর জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ওই ব্যক্তির ফোনে একাধিকবার পেগাসাস স্পাইওয়্যার হামলা চালায় বলে তাঁর দাবি। সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হলফনামায় ওই গবেষক বলেছেন, "২০২১-এর মার্চে একটি ফোনে একাধিকবার পেগাসাস হানার বিষয়টি দেখা যাচ্ছে। পেগাসাস ম্যালওয়্যার প্রক্রিয়াটি ডেটাবেস থেকে এন্ট্রিগুলি মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে, এই প্রবণতাটি এটিরই ইঙ্গিত করছে।"
অপর সাইবার নিরাপত্তা গবেষক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আরও বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন ''এই মামলায় আবেদনকারীদের মধ্যে ৬ জনের অ্যান্ড্রয়েড ফোন খতিয়ে দেখেছি। তার মধ্যে চারটি ফোনে ম্যালওয়্যারের স্বতন্ত্র সংস্করণ খুঁজে পেয়েছি। বাকি দুটি ডিভাইসে পেগাসাসের আসল সংস্করণের ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে।''
এরই পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ''আমাদের কাছে অ্যান্ড্রয়েডের জন্য একটি এমুলেটর রয়েছে, যেটা দিয়েই আমরা যাচাই করেছি। দেখা গিয়েছে, এতে ম্যালওয়্যারের সমস্ত রূপ রয়েছে। আমরা যা পেয়েছি তা এতটাই মারাত্মক যে এটি বৈধ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে না। এই প্রযুক্তির ব্যবহারে শুধুমাত্র আপনার চ্যাটগুলিই পড়া যায় না, এটি (ম্যালওয়্যার) আপনার ভিডিওগুলিও পেতে পারে। যে কোনও সময় অডিও বা ভিডিও চালুও করতে পারে।"
আরও পড়ুন- পেগাসাস বিতর্ক: দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের খবরের তদন্ত হোক, কমিটির কাছে দাবি এডিটরস গিল্ডের
২০২১-এর ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট অবৈধভাবে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের ব্যবহারের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে প্যানেল তৈরি করে। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রনের তত্ত্বাবধানে তিন সদস্যের একটি প্যানেল নিয়োগ করা হয়েছিল।
তিন সদস্যের কমিটিতে ছিলেন গান্ধীনগরের ন্যাশনাল ফরেনসিক সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির ডিন ডঃ নবীন কুমার চৌধুরী, কেরলের অমৃতা বিশ্ব বিদ্যাপীঠমের অধ্যাপক ডঃ প্রবাহরণ পি এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, বোম্বাই-এর ইনস্টিটিউট চেয়ার সহযোগী অধ্যাপক ডঃ অশ্বিন অনিল গুমাস্তে।
Read full story in English