শিল্পকলার প্রদর্শনীতে আপত্তিকর শিল্পকলার উপস্থিতির জেরে বিক্ষোভ ছড়াল গুজরাতের ভাদোদরার মহারাজা সয়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুক্রবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীতে একাধিক শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে। তার মধ্যে কয়েকটিকে নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-সহ একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের। ওই সব সংগঠনের অভিযোগ, চিত্রগুলো 'অপ্রীতিকর' ও 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে'।
২০০৭ সালে এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছিল। ডিন সেই প্রস্তাব ভেঙেছেন বলেও অভিযোগ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর। বিক্ষোভকারীদের মূল আপত্তি দুটি শিল্পকর্ম নিয়ে। তার মধ্যে একটি দেব-দেবীর কাটআউট ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নারীর ওপর অত্যাচারের রিপোর্ট। অন্যটি, অশোকস্তম্ভের সঙ্গে 'অশ্লীলভাবে' থাকা ছবির কোলাজ।
এই সবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে একদল বিক্ষোভকারী বৃহস্পতিবার প্রদর্শনী হলঘরে ঢুকে পড়ে। এই প্রদর্শনী হলঘরই শুক্রবার দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়ার কথা। ঘটনায় তীব্র বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন সংশ্লিষ্ট ডিন ড. জয়রাম পোদুভাল। তিনি দাবি করেন, এই সব ছবিগুলো প্রদর্শনীর অংশ নয়। ছবিগুলো কোথা থেকে এসেছে, তা তিনি জানেন না-বলেও দাবি করেন ডিন। তিনি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগ করেছেন। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে ডিনের দাবি, 'ওরাই ছবিগুলো এখানে টাঙিয়ে দিয়েছিল। এটা গোটা প্রতিবাদটাই ফ্যাকাল্টির বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র।' তবে, বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, কর্তৃপক্ষকেই প্রমাণ করতে হবে যে ছবিগুলো তাঁদের কোনও শিক্ষার্থীর নয়। এজন্য কর্তৃপক্ষকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
আরও পড়ুন- বিনা আবেদনে বিদ্যুতে ভর্তুকি নয়, অবস্থান বদল মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের
বিক্ষোভ চলাকালীন চারুকলা বিভাগের কর্মীরা প্রদর্শনী রক্ষা করতে এগিয়ে এলে, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয়। বিক্ষোভকারীরা চারুকলা বিভাগের কার্যালয় ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ ডাকেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পুলিশের সামনেও বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেয়। চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' বলে দাবি করে গালাগাল দেয়। 'সংস্কৃতি ও ধর্মকে অসম্মান করার' অভিযোগে শিক্ষার্থীদের তারা দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়।
এই প্রসঙ্গে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সদস্য আইনজীবী নীরজ জৈন বলেন, 'আমি এমএস ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্রনেতা হিসেবে সেখানে গিয়েছিলাম। আমরা সব ধর্মকেই অসম্মান করার বিরুদ্ধে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত, ধর্ম নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি বন্ধ করা। চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের যদি সত্যিই প্রতিভা এবং শৈল্পিক মন থাকে, তাহলে বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পরিবর্তে তাদের আরও আকর্ষণীয় কিছু করা উচিত। আমরা শিল্পকর্মের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু, শিল্পের নামে ধর্মকে অপমান করার চেষ্টা হলে তার প্রতিবাদ জানাব।'
Read story in English