Advertisment

পুলওয়ামা হামলায় ২২ বছরের ধৃত যুবক তিনমাস ধরে পুলিশ হেফাজতে ছিল, দাবি পরিবারের

শ্রীনগরের এক পদস্থ আধিকারিক স্বীকার করে নিয়েছেন যে শুক্রবার তহশিলদার (ম্যাজিস্ট্রেট) শাকিরকে জামিন দিয়েছিলেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Pulwama, NIA

পুলওয়ামার হাজিবলের বাড়িতে মা জামিলা (ফোটো- শোয়েব মাসুদি)

পুলওয়ামা হামলায় প্রথম অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার বলে দাবি করে যে ২২ বছরের যুবককে শুক্রবার এনআইএ আদালতে পেশ করেছে, তার পরিবারের অভিযোগ, গত বছর ৭ ডিসেম্বর থেকে সে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

Advertisment

শাকির বশির মাগরের মা জামিলা সানডে এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন গত দু মাসের বেশি সময় ধরে হেফাজতে রয়েছে তাঁর পুত্র।

শাকির গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এক ঘন্টার জন্য বাড়ি এসেছিলেন, তারপর ফের তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন তাঁদের বলা হয়েছিল শাকিরকে ছেড়ে দেওয়া হবে। সে কথা শুনে শুক্রবার শ্রীনগর এসে তাঁরা জানতে পারেন পুলওয়ামা মামলায় শাকিরের নাম যুক্ত করা হয়েছে।

হিন্দু সেনার হুমকি, শাহিনবাগে জারি ১৪৪ ধারা

এনআইএ দাবি করেছে শাকিরের গ্রেফতারি "বড়সড় সাফল্য"। বলা হয়েছে শাকরি জৈশ এ মহম্মদের সঙ্গে যুক্ত ছিল যে আদিল আহমেদ দারকে আক্ষয় দিয়েছিল। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে যে বোমা বিস্ফোরণে ৪০ জন নিরাপত্তাকর্মী মারা যান, তাতে এই আদিল আহমেদ দারই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল বলে অভিযোগ। শাকিরকে জম্মুতে এনআইএ-র বিশেষ আদালতে তোলা হয়। "বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য" তাকে ১৫ দিনের এনআইএ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

শাকিরকে হেফাজতে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেনি পুলিশ। সানডে এক্সপ্রেসকে জানানো হয়েছে তার নাম রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসবাদী মামলায়।

শাকিরের বাবা বশির আহমেদের আসবাবপত্রের দোকান রয়েছে। শনিবার সকালে তাঁকে নিরাপত্তাবাহিনী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যায়। শুক্রবার গভীর রতে এবং শনিবার সকালে নিরাপত্তা বাহিনী পুলওয়ামা জেলার কাকাপোরায় মাগরের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। বেশ কিছু ঘর তালা বন্ধ করে রাখা হয়। মাত্র তিনটি ঘর খোলা ছাড়া হয়।

বারবার ভেঙে পড়ছিলেন জামিলা। এনআইএ-র অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, "পুলিশ আমাদের বলেছে শাকিরকে শুক্রবার ছেড়ে দেওয়া হবে, ও বাড়ি ফিরতে পারবে। ওর বাবা আর দাদু শ্রীনগর গিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে তহশিলদারের সই করা বন্ডও ছিল, যাতে শাকিরকে ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া ছিল।"

শাকিরের দাদু গুলাম মহম্মদের কথায়, "কিছু লোক বাইরে অপেক্ষা করছিল। শাকির বাইরে আসতেই ওকে তুলে নিয়ে য়ায়। আমাদের পরে বলা হয় শাকিরকে এনআইএ গ্রেফতার করেছে।" জামিলা বলেছেন শাকিরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা জানানো হয়নি।

শ্রীনগরের এক পদস্থ আধিকারিক স্বীকার করে নিয়েছেন যে শুক্রবার তহশিলদার (ম্যাজিস্ট্রেট) শাকিরকে জামিন দিয়েছিলেন। পুলওয়ামার পুলিশ সুপার আশিস মিশ্র জানিয়েছেন শাকির যে পুলিশ হেফাজতে ছিল, সে ব্যাপারে কোনও তথ্য তাঁর কাছে ছিল না।

পরিবারের দাবি শাকির নির্দোষ। জামিলা বলেন, "আমি বিশ্বাস করি না আমার ছেলে এধরনের কাজকর্মে যুক্ত থাকতে পারে। ও সকালে বাবার দোকানে যেত, সন্ধেবেলা চলে আসত।"

শাকিরের দাদা মহম্মদ ইমরান বলেছেন, শাকিরকে প্রথমবার গ্রেফতার করা হয় জুলাই মাসে। এক সপ্তাহের কিছু পর ওকে ছেড়ে দেওয়াহয়। তারপর ৭ ডিসেম্বর নিরাপত্তাবাহিনীর লোকজন শাকিরকে তুলে শ্রীনগর নিয়ে চলে যায়। জামিলা বলেন, "ওকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে, তার কারণ জানানো হয়নি।"

১৭ ফেব্রুয়ারি শাকিরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর "শ্রীনগর পুলিশের কাছ থেকে ফোন আসে। শাকির শ্রীনগর যায়। তখন থেকে ও পুলিশ হেফাজতেই ছিল।" জানিয়েছেন জামিলা।

শুক্রবার এনআইএ-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "শাকির আরও স্বীকার করেছে যে সে আদিল আহমেদ দার ও পাকিস্তানি জঙ্গি মহম্মদ উমর ফারুককে ২০১৮র শেষ থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার বাড়িতে আশ্রয় দেয় এবং আইইডি বানাতে সাহায্য করে।" জামিলা জানিয়েছেন তাঁদের বাড়িতে কেউ ছিল না। "আমরা এ রকম কিছু জানি না। এসব মিথ্যে কথা।"

জামিলাকে সান্ত্বনা দিতে বাড়ি আসছেন তাঁর প্রতিবেশীরা। তাঁদেরই মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানালেন, "শাকির যদি পুলওয়ামা বোমা হামলায় যুক্ত থাকে, তাহলে এতদিন পর সে কথা জানানো হচ্ছে কেন? পুলিশ কেন পরিবারের লোকজনকে ফোন করে বলল শাকিরকে ছেড়ে দেওয়া হবে? শাকির যদি এক বড় ঘটনায় যুক্ত থাকে তাহলে পুলিশ সে কথা জানাল না কেন? এ সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া জরুরি।"

এক বছরের পুরনো পুলওয়ামা মামলায় শাকিরকেই প্রথম গ্রেফতার করা হয়েছে বলে এনআইএ জানিয়েছে। একদিন আগেই একজন এ মামলায় উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। এনআইএ এ মামলায় অন্য যাদের অভিযুক্ত করেছে, তারা সকলেই মৃত। হয় সেদিনের বিস্ফোরণে, নয়ত পরবর্তী কোনও এনকাউন্টারে তারা নিহত।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Pulwama Attack
Advertisment