সময়টা ১৯৬১ সাল। দিনটা ২৩ ফেব্রুয়ারি। শহর কলকাতা নেমে এসেছিল পথে, রানিকে দেখতে। ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ওই দিন শহর কলকাতায় এসেছিলেন। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর ছিলেন সরোজিনী নাইডু। তিনি ছিলেন রানি এলিজাবেথের সঙ্গে। ভারত তখন স্বাধীন। সেই প্রথম ব্রিটেনের কোনও রানির পা স্বাধীন ভারতে পড়েছিল। তাঁকে স্বাগত জানাতে শহরের রাজপথে বসেছিল তোরণ। হুডখোলা গাড়িতে চেপে রাজপথ ধরে রাজভবনে গিয়েছিল রানির গাড়ি। যা দেখতে পথের দু'ধারে ভিড় করেছিলেন অসংখ্য মানুষ। যাঁরা পারেননি, তাঁরা বাড়ির ছাদে, বাড়ির কার্নিসে ভিড় করেছিলেন। সেখানও ব্যাপক ঠেলাঠেলি। সকলেই রানিকে দেখতে চায়।
তখন ছোট, কিন্তু আজও সেসব দিব্যি মনে আছে ওমপ্রকাশ, মহম্মদ ওহিদুলদের। আজ তাঁরা কেউ কলকাতায় মুটের কাজ করেন। কেউ বা ঠেলা চালান। জানালেন, রানিকে দেখতে চেনা লোকেদের বাড়ির ছাদে উঠে পড়েছিলেন। অতটা সৌভাগ্য হয়নি রহিম, ইসমাইলদের। কলকাতায় কারও বাবা মুড়ি-বাদাম বিক্রি করতেন। কারও বাবা আবার পথে বসে মুচির কাজ করতেন। বংশ পরম্পরায় তাঁরাও সেই পেশাই বেছে নিয়েছেন। জীবনে তারপর অনেক উত্থান-পতন গিয়েছে। অনেক ভাল-মন্দ দিন কেটেছে।
কিন্তু, সেই দিনটা ছিল সবচেয়ে স্পেশ্যাল। আজও তাঁরা সেসব ভুলতে পারেননি। ভালো করে কিছুই দেখতে পারেননি। বাবা-কাকার ঘাড়ে চেপে রানি দেখা। শুধু মনে আছে, 'সামনে একের পর এক বাইকে চেপে বিশাল পুলিশবাহিনী। আর, কাতারে কাতারে মানুষের কণ্ঠস্বর। রানি তখন যুবতী। তাঁর গাড়ি আসার আগে থেকেই ভিড় সামলাতে ঠেলাঠেলি শুরু করেছিল পুলিশ।' সেই ঠেলাঠেলিতে কিছু দেখাই দায়। আবার, এত ভিড় যে পিছনে সরারও উপায় নেই।
আরও পড়ুন- মাধ্যমিকে এবারও জেলার জয়জয়কার, সাফল্যের নিরিখে সামান্য পিছিয়ে মেয়েরা
রানির প্রয়াণে ওমপ্রকাশ, ওহিদুলদের স্মৃতিতে যেন বারবার ফিরে আসছে সেই দিনগুলির কথা। রানি আর নেই। ৯৬ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। গত বুধবারই রানির ব্রিটেনের মন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু, তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির কারণে সেই বৈঠক বাতিল হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবারই সব শেষ। হঠাৎ করে শরীরটা যেন একটু বেশিই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বিকেলে চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে প্রয়াত হয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।