কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও আমেরিকার কূটনীতিবিদ নিকোলাস বার্নসের সঙ্গে শুক্রবার এক আলোচনায় বলেছেন সহনশীলতা ও নতুন আইডিয়ার প্রতি খোলা মনোভাব ভারতে যেভাবে উধাও হয়ে যাচ্ছে, তাতে তিনি দুঃখিত। রাহুল বলেন জনগণের একাংশ ভারতের কাঠামো দুর্বল করছে।
রাহুল বলেন, “আমরা খুবই সহনশীল দেশ। আমাদের ডিএনএ-তেই সহনশীলতা রয়েছে। নতুন আইডিয়া আমাদের গ্রহণ করতে পারা উচিত। আমাদের খোলামেলা হওয়ার কথা, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, ওই ডিএনএ, ওই খোলামেলা ডিএনএ ক্রমশ উধাও হয়ে যাচ্ছে। আমি খুবই দুঃখের সঙ্গে বলছি যে মাত্রার সহনশীলতা দেখতে আমি অভ্যস্ত ছিলাম, তা এখন আর দেখি না। আমেরিকাতেও তেমন দেখি না, ভারতে তেমন দেখি না।”
রাহুল আরও বলেন, “যেভাবে আমেরিকায় আপনারা আফ্রিকান আমেরিকান, মেক্সিকান ও অন্যদের সঙ্গে ভেদাভেদ করেন, সে ভাবেই আপনারা ভারতে হিন্দু মুসলিম শিখদের মধ্যে ভেদাভেদ করেন, আপনারা দেশের কাঠামো দুর্বল করছেন। কিন্তু যারা দেশের কাঠামো দুর্বল করছেন, তাঁরাই জাতীয়তাবাদী বলে নিজেদের পরিচয় দেন।” কথোপকথনের সময়ে হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের অধ্যাপক বার্নস বলেন, ভারত ও আমেরিকার নিজেকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, যা চিনের মত “কর্তৃত্ববাদী দেশে” সম্ভব নয়।
লকডাউনে পূর্ণ বেতন দিতে না পারা সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নয়: সুপ্রিম কোর্ট
বার্নস বলেন, “বহু ক্ষেত্রে ভারত ও আমেরিকা একই রকমরে বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। আমরা উভয়েই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অধীন ছিলাম, আমরা আলাদা শতাব্দীতে তাদের থেকে নিজেদের স্বাধীন করেছি... কোনও কোনও সময়ে দেশগুলিকে আমরা আসলে কী বিষয়ক আলোচনা ও রাজনৈতিক তর্কের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। আমরা কী ধরনের দেশ? আমরা একটা অভিবাসী দেশ, একটা সহনশীল দেশ।”
আমেরিকার গভীর রাজনৈতিক ও অস্তিত্বের সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি দেখতে পাই গণতন্ত্রের শক্তিগুলি পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যায়। আমরা আমাদের পার্থক্যগুলি রাজনৈতিক প্রচার বা রাস্তার বিক্ষোভের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি, কিন্তু সেটুকু অন্তত পারি। চিন ও রাশিয়ায় কর্তৃত্ববাদ ফিরে আসছে। আমাদের, গণতন্ত্রীদের, কখনও কখনও আমাদের স্বাধীনতার জন্যেই কষ্টকর অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, কিন্তু সে কারণেই আমরা বেশি শক্তিশালী।”
বার্নস আলোচনায় ট্রাম্পকে কর্তৃত্ববাদী ব্যক্তিত্ব বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “উনি (ট্রাম্প) নিজেকে একটা পতাকায় মুড়ে রেখেছেন। উনি জানিয়ে দিয়েছেন উনি একাই সব সমস্যার সমাধান করবেন। আমি অবশ্যই বলব ট্রাম্প অনেক অর্থেই একজন কর্তৃত্ববাদী ব্যক্তিত্ব। কিন্তু আপনি দেখবেন আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী থেকেছে।”
করোনাভাইরাস অতিমারী নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বার্নস। তিনি বলেন, “এ সংকট জি২০-র জন্য তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচিত ছিল বিশ্বের সকলের ভালোর জন্য একযোগে কাজ করা।”
রাহুল বলেন মানুষ সংকীর্ণমনা হয়ে যাচ্ছিলেন, কোভিড সংকট যে মনোভাব আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে তিনি পরে বলেন, “কোভিডের পর নতুন আইডিয়া এবং নতুন পথ সামনে আসছে। আমি ইতিমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি মানুষ আগের চেয়ে বেশি অন্যের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। এখন তাঁরা একত্রিত হওয়ার সুবিধা উপলব্ধি করতে পারছেন।”