আবহাওয়ার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। স্কুল কলেজে গরমের ছুটি। সমতলের মানুষ নিয়ম মেনে এখন পাহাড়মুখী। এ মরশুম পর্যটকদের। শৈলরানির সৌন্দর্য উপভোগ করতে রাজ্যের পাশাপাশি ভিন রাজ্য এবং ভিন দেশ থেকেও মানুষ আসছেন দার্জিলিং পাহাড়ে। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গের সমতলের তাপমাত্রার পারদও ৪০ ছুঁই ছুঁই। হাতের কাছের দার্জিলিংয়ের শীতলতা অনুভব করতে তাঁরাও ছুটে যাচ্ছেন পাহাড়ে। সব মিলিয়ে পাহাড় এখন ভিড়ে ঠাসা।
মাসখানেক আগেও যাঁরা বুক করার চেষ্টা করেছেন, তাঁরাও সবাই হোটেলে জায়গা পাননি। এদিকে গত মাসেই চারদিনের পাহাড় সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সফর শেষ হতে না হতেই দক্ষিণি সিনেমার শুটিংয়ের জন্যে পাহাড়ে এসে পৌঁছেছেন সুপারস্টার রজনীকান্ত। সব মিলিয়ে দার্জিলিং পাহাড়ে এখন টানা ভিআইপি মুভমেন্ট। রজনীকান্তের শুটিং পার্টিতে লোকসংখ্যা প্রায় ৬০০। মাসখানেক দার্জিলিংয়ে থাকার কথা গোটা দলের। তাঁরাও অগ্রিম বুক করে নিয়েছেন হোটেল। দার্জিলিংয়ের হোটেলগুলির সিংহভাগই শুটিং পার্টির দখলে।
আরও পড়ুন: Rajinikanth in Darjeeling: শুটিং দার্জিলিংয়ে, বাংলায় আসছেন রজনীকান্ত
এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে চিরাচরিত নিয়মে অসদুপায়ে মুনাফা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন পাহাড়ের কিছু অসৎ ব্যবসায়ী। সুযোগ বুঝেই তাঁরা বাড়িয়ে দিয়েছেন হোটেলের ভাড়া। ১,৫০০-২,০০০-এর ঘর মিলছে ৩০০০-৩,৫০০ টাকায়। কম যান না গাড়ি চালকরাও। আখের গোছাতে পর্যটকদের পকেটে কোপ মারছেন তাঁরাও। ৩,৫০০-৪,০০০ টাকার কমে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ে যেতেই চাইছেন না কেউ।
গত বছর এই সময়ে পাহাড় ছিল অগ্নিগর্ভ। দার্জিলিংয়ে আসার কথা চিন্তাও করেননি পর্যটকেরা। এবার তাঁদের অনেকেই সুদে-আসলে পুষিয়ে নিতে চান। ফলে অন্যান্যবারের তুলনায় চলতি বছরে পাহাড়ে পর্যটকদের চাপ একটু বেশিই। কিছুদিন আগেই পাহাড় সফর সেরে ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি থাকাকালীন পাহাড়ে একটা বাড়তি নিরাপত্তা থাকেই। মুখ্যমন্ত্রী যে হোটেলে থাকেন সেখানে তো বটেই, তাঁর যে সব জায়গায় যাওয়ার কথা, সেই সব এলাকাতেও পর্যটকদের আসাযাওয়ার উপরে নিয়ন্ত্রণ থাকে।
এমতাবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর সফর শেষ হতে না হতেই ফের সুপারস্টার রজনীকান্তের পাহাড় সফর পর্যটকদের কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলছে বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এর প্রধান কারণ হলো, রজনীকান্তও 'জেড' ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পান। ফলে তিনি যে সব এলাকায় শুটিং করবেন সেই জায়গাগুলিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশের উপরে আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শুটিং স্পটের প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকেই দড়ি দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে এলাকা। ধারে কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না কাউকেই। এমনকি ঘেরা জায়গার ভিতর প্রবেশ করতে হলে পুলিশ কর্মীদেরও বিশেষ অনুমতি লাগছে।
আরও পড়ুন: Rajinikanth: কর্নাটকে ‘কালা’ বির্তকে মুখ্যমন্ত্রীকে আর্জি থালাইভার
রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে রজনীকান্তের ব্যক্তিগত কমান্ডো বাহিনীও। তবুও থালাইভাকে একবার দেখার উৎসাহে কমতি নেই তাঁর অনুরাগীদের। হোটেল এবং শুটিং স্পটের সামনে ভিড় জমাচ্ছেন তাঁরা। এমনিতেই পাহাড়ের রাস্তা অনেকটাই ছোট, তার মধ্যে রাস্তায় রজনীর দর্শনাকাঙ্ক্ষী মানুষের ভিড়ে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে দার্জিলিং পুলিশকে। সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে নিত্যযাত্রীদেরও।
এদিকে পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিরোধিতা করেছেন ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটার্স এসোসিয়েশন (এতোয়া)। সংগঠনের সভাপতি দেবাশিস মিত্র বলেন, "শুধু আমাদের দেশ নয়, ভিন দেশ থেকেও পর্যটক এখানে আসেন। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি হোটেল কিংবা গাড়ি ভাড়া নেওয়া হলে তাঁদের কাছে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।" দার্জিলিংয়ের হোটেল মালিক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সমীর সিংহল বলেন, "পাহাড় এখন পর্যটকে ঠাসা। এই সময় কোন হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ এলে আমরা পুলিশের কাছে নালিশ জানাব।"