১৪ মাসের শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে উত্তাল মোদী রাজ্য। গত সপ্তাহে সবরকাঁথা জেলায় ১৪ মাসের এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে বিহারের বাসিন্দা তথা গুজরাতের একটি কারখানার কর্মী রবীন্দ্র সাহুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রবীন্দ্রের গ্রেফতারির পর থেকেই অশান্ত গুজরাতের পাঁচ জেলা। অ-গুজরাতিদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে সে রাজ্যে। ভিনরাজ্যের বাসিন্দাদের উপরই মূলত বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছে। বিশেষত, হামলাকারীদের নজরে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দারা। হিংসার ভয়ে বহু ভিনরাজ্যের বাসিন্দাই গুজরাত ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। হিংসার ঘটনায় সে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে গুজরাত পুলিশ।
গুজরাতের গান্ধীনগর, পাটান, সবরকাঁথা, মেহসানা, আহমেদাবাদে হিংসা ছড়িয়েছে। হিংসার ঘটনা প্রসঙ্গে ডিজিপি শিবানন্দ ঝা জানান, ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অশান্তি শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একটা সম্প্রদায়ই অ-গুজরাতিদের উপর হামলা চালাচ্ছে। হামলার অভিযোগ উঠেছে ঠাকুর সেনার বিরুদ্ধে। ঠাকুর সেনার প্রেসিডেন্ট তথা কংগ্রেস বিধায়ক ও গুজরাত কংগ্রেসের প্রধান অল্পেশ ঠাকুর দাবি জানিয়েছেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর দলের সব সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিতে হবে, নইলে অনশন ধর্মঘটের হুমকিও দিয়েছেন তিনি। হামলার ঘটনায় ঠাকুর সেনার সদস্যরা নির্দোষ বলেও দাবি করেছেন তিনি। এমনকি, রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আর্জিও জানিয়েছেন ঠাকুর। ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে অশান্তির আগুনে ঘি ঢালার মতো কর্মসংস্থানের বিষয়টিও উঠে এসেছে। সে রাজ্যের কলকারখানায় স্থানীয় যুবকদের প্রাধান্য দেওয়ার দাবিও উঠেছে।
আহমেদাবাদ শহর ও ছটি জেলা মিলিয়ে প্রায় ৫০টি এফআইআর করা হয়েছে। যেখানে প্রায় ৫০০ জনের নাম রয়েছে বলে দাবি করেছে ঠাকুর সেনা। অল্পেশ বলেছেন, রাজ্যের কারখানাগুলোয় ৮০ শতাংশ স্থানীয় যুবককে কাজ দেওয়ার যে কথা বলা রয়েছে, তা মানা হচ্ছে না। তাই সরকার এবং ওই কারখানাগুলির বিরুদ্ধে তাঁরা সোচ্চার হয়েছেন। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন কারখানা ও সংস্থার অফিসের সামনে নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করা হয়েছে।
আরও পড়ুন, একাধিক মহিলাকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ কমেডিয়ানের বিরুদ্ধে
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডজন খানেক ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা গিয়েছে যে, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দাদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে, হুমকি দেওয়া হচ্ছে, সে রাজ্য থেকে চলে যাওয়ার জন্য।
গান্ধীনগরের আইজি মহেন্দ্র সিং চাবড়া জানিয়েছেন, "হিংসার ঘটনায় শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত ২৩টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং ১৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।" মূলত কারখানার কর্মীদের উপরেই হামলা চালানো হচ্ছে। উত্তর গুজরাতের হিংসা বিধ্বস্ত জেলাগুলিতে প্রায় ২০ টি স্টেট রিজার্ভ পুলিশ (এসআরপি) কোম্পানি মোতায়েন করা হয়েছে। সমস্ত পুলিশ সুপার, ডেপুটি পুলিশ সুপারদের নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এলাকায় আরও টহলদারি বাড়ানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
হিংসার ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে বহু ভিনরাজ্যের বাসিন্দাই গুজরাত ছাড়ছেন। হিংসার জেরে বেশ কিছু বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ৭০টি ফেসবুক প্রোফাইল চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আহমেদাবাদ সাইবার সেল।
Read the full story in English: Rape sets off revenge attacks on UP, Bihar migrants in Gujarat, 180 held