তৃতীয় পর্যায়ের লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিগুণত্বের হার দ্রুততর হলেও সরকারের মধ্যে সাধারণ ভাবনা শিথিলতা প্রত্যাহারের দিকে ঝুঁকে নেই, বরং ক্রমশ লক ডাউন তুলে দেবার দিকেই। সরকারের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কমিটির প্রকৃতি এবং গত ১৪ দিনে কোভিড ১৯ মোকাবিলায় নতুন জারি করা অ্যাডভাইজরি তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে গত ৩ মে-তে সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৩৯৯৮০, শনিবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯.৬৬২-তে, এক সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ১৩০১ থেকে ১৯৮১-তে পৌঁছিয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউন শেষ হয়েছিল ৩ মে-তে।
আরও পড়ুন, করোনা হিসেব- নতুন সংক্রমণের সংখ্যা কমছে
শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ১০ রাজ্যে সংক্রমণ সংখ্যা বাড়ছে সেখানে আরও কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে গুজরাট, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা। এর আগে যেসব জেলায় সংক্রমণের সংখ্যা বেশি ছিল, সেরকম ২০ জায়গায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পাঠানো হয়েছিল।
একই সঙ্গে এক সরকারি সূত্র জানিয়েছে, যদিও সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে, সিস্টেমের মধ্যে কথা হচ্ছে লকডাউন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়েই। বিভিন্ন মন্ত্রক প্রয়োজনীয় অ্যাকশন পয়েন্টের পরিকল্পনা করছে।
একটি সূত্র জানাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে শিক্ষা, শক্তি, আর্থিক ক্ষেত্র, কৃষি, অসামরিক বিমান পরিবহণের মত বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক বৈঠক হয়ছে। সূত্র বলছে, আগের বৈঠকগুলিতে যেমন লকডাউন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, সে নিয়ে আলোচনা হত, এখন আলোচনা হচ্ছে পরবর্তী কৌশল নিয়ে।
এর ইঙ্গিত ধরা পড়েছে বৈঠক পরবর্তী ঘোষণাতেও- সে সিবিএসই বোর্ডের অবশিষ্ট পরীক্ষার দিন ঘোষণা নিয়ে হোক, নিট এবং জয়েন্ট (মেন) পরীক্ষা নিয়ে হোক বা বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাট সরকারের শ্রমিক আইন শিথিলতার ঘোষণাতেই হোক।
একটি সূত্র জানিয়েছে, “সংক্রমণের সংখ্যা বাড়বে। যদি এ রোগের সম্পূর্ণ অন্যরকম কোনও চেহারা না নেয়, তাহলে স্বাভাবিক জীবনযাপনের দিকে ফিরে যাওয়ার দিকেই সরকারের মধ্যে সাধারণ সহমত দেখা যাচ্ছে।”
আরও পড়ুন, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, তবু পাকিস্তানে উঠে গেল লকডাউন
তবে আন্তঃরাজ্য চলাচল ও রেড জোনের জেলাগুলিতে শিথিলতার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ১৭ মে লকডাউনের তৃতীয় পর্যায় শেষ হওয়ার আগে সরকার এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেবে। এ ন্যাপারে সবচেয়ে সমস্যার কারণ হল মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাই, আমেদাবাদ, পুনে, ইন্দোর ও থানের মত জায়গাগুলি হটস্পট হয়ে রয়েছে।
শনিবার বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ উৎপাদন শিল্প ফের শুরু করার ব্যাপারে নতুন গাইডলাইন প্রকাশ করেছে।
শুক্রবার সরকার কোভিড-১৯ রোগীদের ছাড়ার ব্যাপারে নির্দেশিকা সংশোধন করেছে। বলা হয়েছে মৃদু ও মাঝারি সংক্রমিতদের ডিসচার্জের আগে টেস্টের প্রয়োজন নেই।
শনিবার উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে এক রিভিউ মিটিংয়ের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেন, কোভিড ১৯ রোগীদের ২.৪১ শতাংশ আইসিইউতে রয়েছেন, ০.৩৮ শতাংশ ভেন্টিলেটরে রয়েছেন এবং ১.৮৮ শতাংশ অক্সিজেন সাপ্র্টো রয়েছেন। এক আধিকারিক বলেন, “এটা একটা সাধারণ প্রবণতা হয়ে উঠছে, যতজন অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন, তার চেয়ে বেশি জন আইসিইউ-তে রয়েছেন, কারণ হাসপাতালগুলি কোনও সুযোগ ছাড়ছে না। সংক্রমণের সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে কারণ অন্য কারও আইসিইউ বেডের প্রয়োজন হতে পারে।“
গত কয়েকদিন ধরে লকডাউন শিথিল করার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ায় স্বাস্থ্য সম্পদ খালি রাখার লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে:
শুক্রবার স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে মৃদু ও মাঝারি সংক্রমিতদের ছাড়ার আগে টেস্টের প্রয়োজন নেই। আগের নীতি ছিল, ছাড়ার আগে পরীক্ষায় নেগেটিভ আসতে হবে।
পদস্থ এক আধিকারিক জানিয়েছেন ছাড়ার সময়ে টেস্টের প্রয়োজন নেই। এর অর্থ কিট নষ্ট করা। এঁদের তো হোম আইসোলেশনে থাকতেই হবে। ওি টেস্ট যাঁর বেশি প্রয়োজন তাঁকে করা যেতে পারে। দেশে এখন প্রতিদিন ৯৫ হাজার জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। সরকার বলেছে কিট বা টেস্টিং-এর কোনও সমস্যা নেই। এখনও পর্যন্ত ১৫২৫৬৩১ জনের টেস্ট করা হয়েছে।
২৭ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রক মৃদু বা উপসর্গবিহীনদের বাড়িতে থাকার ব্যাপারে নির্দেশিকা সংশোধন করে, বলা হয় তাঁদের কঠোর কোয়ানান্টিন মেনে চলতে হবে, কোয়ারান্টিন সেন্টারে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।তবে বলা হয়, হোম কোয়ারান্টিনে থাকলে আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে।
৬ মে গাইডলাইনে বলা হয় ন্যূনতম মেডিক্যাল প্রয়োজনের জন্য ২১৫টি স্টেশনে রেলওয়ে কোচ প্রস্তুত রাখতে হবে।
এর একদিন পরেই স্বাস্থ্যমন্ত্রক যাঁরা অর্থদানে সক্ষম, তাঁদের হোটেল কোয়ারান্টিনের ব্যবস্থার উল্লেখ করে, বিশেষ করে যাঁরা বিদেশ থেকে এসে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ান্টিনে যাবেন, তাঁদের কথা মাথায় রেখে। মন্ত্রক জানিয়েছে, এর ফলে পরিবারের উপর চাপ কমবে, উক্স ব্যক্তি আরামে থাকতে পারবেন এবং পরিবারের সদস্য বা প্রতিবেশীরাও সুরক্ষিত থাকবেন। এক সূত্র জানিয়েছে মন্ত্রক এ ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিল না, কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন হোটেল গোষ্ঠীর সুপারিশে ক্যাবিনেট সচিবের উপরোধে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন