ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওপর একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছে, যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ সালের 'গুজরাট দাঙ্গা' নিয়ে এই তথ্যচিত্রে অনেক বিতর্কিত দাবি করা হয়েছে। 'ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন' নামের এই তথ্যচিত্র নিয়ে বিতর্কের পর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ডকুমেন্টারিতে যা দেখানো হয়েছে তার সঙ্গে তিনি একমত নন বলে জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
বিবিসি প্রকাশিত ডকুমেন্টারি প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, 'আমরা মনে করি এটা একটা প্রোপাগান্ডার অংশ। এর কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। এটিকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে বর্ণনা করে তিনি বলেন যে 'মনে রাখবেন যে এটি ভারতে প্রদর্শিত হয়নি'। বিদেশ মন্ত্রক বলেছে এতে পক্ষপাত, বস্তুনিষ্ঠতার অভাব ও ঔপনিবেশিক মানসিকতা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান'।
২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় ১০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। শুধু ভারতেই নয়, ব্রিটেনেও বিবিসির এই তথ্যচিত্রের বিরোধিতা করা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে এতে দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সঙ্গে মোদীর যোগসূত্র, বিজেপিতে তাঁর ক্রমবর্ধমান মর্যাদা এবং গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে তাঁর নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে এতে। এতে মোদীর মুখ্যমন্ত্রীত্ব থাকাকালীন গুজরাটে দাঙ্গারও উল্লেখ রয়েছে। এই অংশে গুজরাট দাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রী মোদির কথিত ভূমিকার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে বিরোধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভারত ২০০২ গুজরাট দাঙ্গার উপর বিবিসি ডকুমেন্টারিকে 'প্রচারের একটি অংশ' বলে অভিহিত করে বলেছে এটি স্পষ্টভাবে পক্ষপাত, বস্তুনিষ্ঠতার অভাব এবং ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন । ভারতীয় বিদশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বিবিসির এই তথ্যচিত্র প্রসঙ্গে বলেন, এর উদ্দেশ্য এবং এর পিছনে 'এজেন্ডা' সম্পর্কে ভাবতে আমাদের বাধ্য করছে। বিবিসির-র ওই তথ্যচিত্রে, ভারতের সংখ্যালঘু জনসংখ্যার প্রতি নরেন্দ্র মোদী সরকারের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: < ‘অঞ্জলির মতো পরিণতি আমারও হতে পারত’,’ভোররাতের ভয়াবহতায়’ মন্তব্য দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রধানের >
তথ্যচিত্র নিয়ে বিস্তর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এখন এই বিরোধ ব্রিটেনের পার্লামেন্টেও পৌঁছেছে। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাংসদ ইমরান হুসেন এই বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সুকৌশলে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাংসদ ইমরান হুসেন বলেন, "২০০২ সালে ভারতের একাধিক পরিবার পরিজন হারা হয়েছিল। এমনকী এই আঁচ এসে পড়েছিল ব্রিটেনেও। এখনও অসংখ্য মানুষ ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষা করছেন। এই হত্যালীলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কতটা দায়ী? এ বিষয়ে কী অভিমত আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের?"
তার বক্তব্যকে সামনে রেখে সুনাক বলেন, এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের অবস্থান পরিষ্কার, ব্রিটেন কোন হিংসাকে সমর্থন করে না। সুনক আরও বলেন, বিশ্বের কোথাও কোন ধরনের হিংসা ব্রিটেন বরদাস্ত করেনা। তবে নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে যে চরিত্রায়ন করা হয়েছে তার সঙ্গে আমি মোটেও একমত নই'।