সারদা-কাণ্ডে সিবিআই রাজ্য পুলিশের আইপিএস অফিসারদের তলব করায় হইচই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদও শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীদের তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এই প্রথম রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে এক সাংসদকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ইডি দফতরে হাজির হলেও, আপাতত সিজিও কমপ্লেক্স যাচ্ছেন না আর এক তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। সূত্রের খবর, ইডি এবার রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে ৪৫ জন প্রভাবশালীকে তলব করতে চলেছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন ইডির আধিকারিকরা। পুজোর মুখে চিটফান্ড মামলা নিয়ে ইডির তৎপরতায় রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
স্পষ্টতই, রোজ ভ্যালি নিয়ে ভালোমতই নাড়াচাড়া শুরু করে দিয়েছে ইডি। সারদা-কাণ্ডের তদন্তে ইডি যতটা তৎপর ছিল, রোজ ভ্যালির ক্ষেত্রে সে তুলনায় তদন্তের গতি ছিল অনেকটা শ্লথ। এমনকী এই চিটফান্ডের তদন্তকারি আধিকারিককে সরিয়ে দিয়েছিল ইডি। পরবর্তীতে কলকাতা পুলিশ ওই আধিকারিককে গ্রেফতারও করে। এবার দুর্গাপুজোর আগেই তদন্তে গতি এনেছে ইডি। পুজোর পর এই গতি আরও বাড়বে বলেই সূত্রের খবর। তাই রাজনৈতিক নেতা থেকে ব্যবসায়ী বা অন্য পেশার প্রভাবশালীদের তলব করছে ইডি। তাঁরা রোজ ভ্যালি থেকে বিশেষ সুবিধা ভোগ করেছেন বলে মনে করছেন তদন্তকারিরা। তাই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে নতুন তথ্য পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: সারদা-কাণ্ডে রাজ্যের চার আইপিএসকে তলব সিবিআইয়ের
সারদা চিটফান্ডের তুলনায় রোজ ভ্যালির আর্থিক কেলেঙ্কারির পরিমান কয়েকগুণ বেশি। ১৭,০০০ কোটি টাকার আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এই সংস্থার বিরুদ্ধে। তবে বেসরকারি হিসেবে এর তিনগুণ টাকার বেনিয়ম হয়েছে। এই চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার নাম জড়িয়ে আছে। জড়িয়ে আছেন সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। সূত্রের খবর, রোজ ভ্যালির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন এই প্রভাবশালীরা। সেই সব নথিও যোগাড় করেছে ইডি। অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও রেকর্ডিং পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। কেন রোজ ভ্যালির অনুষ্ঠানে হাজিরা, কেনই বা গুনকীর্তন করা হয়েছে ওই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার, সেই সব নিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
জানা গিয়েছে, অদ্রিজা জুয়েলারি শোরুমের কর্মীরা বুধবার ইডির দফতরে গিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, তাঁদের আইনি পথে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ইডির আধিকারিকরা। এই অদ্রিজা জুয়েলারির শোরুমও রোজ ভ্যালির মালিকানাধীন। সংস্থার কর্ণধার গৌতম কুন্ডু গ্রেপ্তার হওয়ার পরও দীর্ঘদিন এই শোরুম খোলা ছিল। গত বছর ডিসেম্বরে অদ্রিজার তিনটি শোরুমে তল্লাশি চালায় ইডি। হাওড়া, বাগুইআটি ও রাসবিহারী, এই তিন জায়গায় টানা প্রায় ৩০ ঘণ্টা তল্লাশি হয়েছিল। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল প্রায় ৯০ কেজি সোনা। জানা গিয়েছে, এই সংস্থা তৈরি করে রোজ ভ্যালিই। তারপর দীর্ঘমেয়াদী লোন দেওয়া হয় নতুন সংস্থাকে। অর্থাৎ আমানতকারীদের টাকা সংগ্রহ করে সেই ফান্ড ট্রান্সফার করা হয়েছিল সুচারুভাবেই। তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে বলে খবর।
আরও পড়ুন: সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ইডিতে, এখন যাবেন না তাপস পাল
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিষয়েও জোর দেওয়া হচ্ছে। সারদা-কাণ্ডে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। রোজ ভ্যালির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চললেও, যে সব প্রভাবশালী সুবিধা নিয়েছেন রোজ ভ্যালির কাছ থেকে, তাঁদের খুঁজে বের করতে চায় ইডি। তাদের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে চাওয়া হবে তাঁরা কি ধরনের সুবিধা নিয়েছেন।
সূত্রের খবর, ৪৫ জনের মধ্যে দুজনকে ডাক বিভাগের মাধ্যমে তলব করা হচ্ছে। বাকিদের ইমেইল, বাড়িতে নোটিশ পাঠানো, ফ্যাক্সসহ নানা পদ্ধতিতে বার্তা পাঠাবে ইডি। শীঘ্রই ইডির দফতরে হাজির হতে বলা হবে। তাঁঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন তদন্তকারীরা।