মন্ডল-মাক্কারাভিল্লাক্কু পুজো উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলে গেল শবরীমালা মন্দিরের দরজা। সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর এই নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য খুলল মন্দির। এবার প্রায় দু'মাসের জন্য মন্দির খুলেছে। ইতিমধ্যে, সমাজকর্মী তৃপ্তি দেশাইকে কোচিন বিমানবন্দরে আটকে দিয়েছেন বিক্ষোভকারী ভক্তবৃন্দদের একাংশ। শনিবার শবরীমালায় আয়াপ্পা দর্শনে যাবেন বলে এদিন কোচিনে এসেছিলেন তৃপ্তি।
উল্লেখ্য, তৃপ্তি দেশাই আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে তাঁর নেতৃত্বে একদল মহিলা আয়াপ্পা দর্শনে যাবে। এ জন্য আগাম পুলিশি নিরাপত্তাও চেয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তৃপ্তি জানিয়েছিলেন, এরপরও তাঁরা আক্রান্ত হলে সে দায় কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য পুলিশের ডিজির। কিন্তু, শুক্রবার সকালে তিনি কোচিন বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর আর এগোতে পারেননি। বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী তাঁদের আটকানোর জন্য বিমানবন্দরের বাইরে জমায়েত করে। এই জমায়েতে অংশ নিয়েছেন রাহুল ঈশ্বর। তিনি বলেছেন, "তৃপ্তিকে বিক্ষোভকারীদের বুকের উপর দিয়ে যেতে হবে"।
আরও পড়ুন- শবরীমালা রায়ের প্রতিবাদে বিজেপি মুখপাত্রের সভায় ব্যবহৃত হলো পুলিশি অত্যাচারের সাজানো ছবি
এদিকে, গতকালই শবরীমালা ইস্যুকে কেন্দ্র করে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়ন। কিন্তু, সেই বৈঠক থেকে ঐক্যমত্যে পৌঁছনো যায়নি। বরং, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ এবং বিজেপি ওই বৈঠককে 'নাটক' বলে বেরিয়ে এসেছে।
প্রসঙ্গত, শতাব্দী প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, কেরালার পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত শবরীমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছরের মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিল না। এই বয়সের মহিলারা ‘ঋতুযোগ্য’ অর্থাৎ ‘অপবিত্র’ এবং তাঁরা প্রবেশ করলে ‘চির ব্রহ্মচারী’ আয়াপ্পার মন্দিরের ‘পবিত্রতা’ বিনষ্ট হবে বলেই যেতে দেওয়া হত না। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই রীতি খারিজ করে সব বয়সের মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, আয়াপ্পা ভক্তকুলের একাংশ সুপ্রিম রায়কে কোনওভাবেই বাস্তবায়িত হতে দেবে না বলে অনড় ছিল এবং এ যাত্রায় শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। সুপ্রিম রায়ের পর ১৭ অক্টোবর শবরীমালা মন্দির খোলে এবং ২২ অক্টোবর তা বন্ধ হয়ে যায়। এরমধ্যে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের একজনকেও মন্দিরে ঢুকতে দেয়নি প্রতিবাদী ভক্তরা। উল্লেখ্য, প্রায় ১০ মহিলাকে মন্দিরের কাছ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেরল জুড়ে এই প্রতিবাদ হিংসাশ্রয়ী রূপ নিয়েছে।
আরও পড়ুন-শবরীমালা ও রক্তে ভেজা স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কী বললেন স্মৃতি ইরানি?
সুপ্রিম কোর্টের শবরীমালা রায়ের প্রেক্ষিতে মিশ্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এসেছে। বিজেপি এবং কেরালা কংগ্রেস এই রায়ের বিরোধিতা করেছে। অন্যদিকে, কেরালার পিনারাই বিজয়ন সরকার প্রথম থেকেই সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করবে বলে জানিয়ে দিয়েছিল। তবে ১০-৫০ বছরের একজন মহিলাও প্রতিবাদীদের টপকে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি।