আন্তর্জাতিক খনিজ তেল বিপণনকারী সংস্থা সৌদি আরামকোর একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিককে গ্রেফতার করেছে উত্তরাখণ্ড পুলিশ। ছুটিতে থাকার সময় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তিনি একটি স্যাটেলাইট ফোন বহন করছিলেন। সেই জন্য জুলাই মাসে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। প্রায় এক সপ্তাহ জেলে কাটাতে হয় আরামকোর ওই কর্তাকে। পরে হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে তিনি ছাড়া পান।
ওই কর্তা সৌদি আরামকোর বিনিয়োগকারী সম্পর্কের প্রধান। নাম ফার্গাস ম্যাকলিওড। তিনি ব্রিটেনে এক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে এই ঘটনা জানিয়েছেন। ওই আধিকারিক জানান, তাঁকে ১২ জুলাই ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস ন্যাশনাল পার্কের হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ৬২ বছর বয়সি এই আধিকারিককে ১৮ জুলাই অবধি চামোলি জেলে রাখা হয়েছিল।
ওই সংবাদমাধ্যমকে আরামকোর কর্তা জানিয়েছেন, স্যাটেলাইট ফোনের জন্যই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ফার্গাস ম্যাকলিওড নামে আদতে ব্রিটেনের বাসিন্দা সৌদি আরামকোর ওই কর্তা জানিয়েছেন, তিনি স্যাটেলাইট ফোন অফিসের কাজে ব্যবহার করেছেন। হোটেলের বাইরে ব্যবহার করেননি। তাঁর সঙ্গে অফিসেরই কয়েকজন কর্মী ছিলেন। তাঁদের নিয়ে তিনি ছুটি কাটাতে উত্তরাখণ্ডে ঘুরেছেন। কিন্তু, সেখানে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করেননি। যা কিছু ব্যবহার করেছেন, হোটেলের ঘরেই করেছেন।
তবুও সেই যুক্ত মানতে চায়নি উত্তরাখণ্ড পুলিশ। তারা তাঁকে গ্রেফতার করেছে। কারণ, উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। তিনি চিনের হয়ে কাজ করছেন কি না, তা বুঝতে পারেনি উত্তরাখণ্ড পুলিশ। সেই কারণেই সন্দেহের বশে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল বলেই ম্যাকলিওড মনে করছেন।
ম্যাকলিওড যে মিথ্যা কথা বলছেন না, তা স্বীকার করে নিয়েছেন চামোলির পুলিশ সুপার শ্বেতা চৌবে। তিনি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে স্বীকার করে নিয়েছেন যে সৌদি আরামকোর ওই কর্তা অনুমতি ছাড়াই স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করছিল। সেই কারণেই চামোলি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। কারণ, ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনীর জওয়ানরা ছাড়া অন্য কারও স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করা নিয়মের বিরুদ্ধ। আর, বিদেশিদের তো বিশেষ অনুমতি ছাড়া স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারের কোনও অনুমতিই নেই।
তবে, চামোলির পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, 'সৌদি আরামকোর ওই কর্তার ধারণাই ছিল না যে ভারতে বিশেষ অনুমতি ছাড়া স্যাটেলাইট ফোন বহন করা বৈধ নয়। সম্পূর্ণ না-জেনেই তিনি ফোনটি বহন করছিলেন। তাই তাঁকে বেশিদিন জেলে রাখা হয়নি। গোটা প্রক্রিয়ায় কোনও ত্রুটি বা ভুল ছিল না-বলেই চামোলির পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।'
আরও পড়ুন- একবার দেখুন তো, ঋষি সুনকের ব্যাপারে এসব জানেন? জানলে চমকে উঠবেন
চামোলির গোবিন্দ ঘাট থানার পুলিশ আধিকারিক নরেন্দ্র সিং রাওয়াত জানিয়েছেন যে তাঁরা ১১ জুলাই সীমান্তের কাছাকাছি এক বিদেশি নাগরিক স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করছে বলে খবর পেয়েছিলেন। অভিযোগ সত্যি কি না খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে একজন পুলিশ আধিকারিককে পাঠানো হয়েছিল। ওই পুলিশ আধিকারিক অভিযোগ সত্যি বলে জানানোর পর ওই বিদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
ঘটনার সময় অভিযুক্ত ফুলের উপত্যকায় বেড়াচ্ছিলেন। সেখান থেকেই তাঁকে আটক করা হয়েছিল। পরে, ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ অ্যাক্ট এবং ইন্ডিয়ান ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি অ্যাক্টের ধারায় গ্রেফতার করা হয়। আদালত ওই বিদেশিকে চামোলি জেলা কারাগারে রাখার নির্দেশ দেয়। ১৮ জুলাই পর্যন্ত কারাগারেই ছিলেন ওই বিদেশি নাগরিক। এরপর, জামিন পেলেও মামলাটি বন্ধ হয়নি। ২৭ জুলাই তিনি এক হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার পর মামলাটি বন্ধ হয়। নয়াদিল্লিতে ব্রিটিশ হাইকমিশনের মুখপাত্র জানান, ওই ব্রিটিশ নাগরিকের মুক্তিতে তাঁরা সহায়তা করেছিলেন।
Read full story in English