যত প্রাবল্য বাড়ছে করোনার, ততই তীব্র হচ্ছে অক্সিজেন আকাল। জীবনদায়ী গ্যাসের হাহাকার বাড়ছে দেশজুড়ে। এরই মধ্যে নাসিকের এক হাসপাতালে অক্সিজেন ট্যাঙ্কারে লিক হওয়ায় প্রায় ৩০ মিনিট বন্ধ হয়ে যায় অক্সিজেন সরবরাহ। তাতেই অক্সিজেন না পেয়ে ২৪ রোগী ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে। সেই ভয়ঙ্কর সময় মনে করতেই কান্নায় গলা বুঝে আসে বাকি রোগীদের পরিবারের।
২৩ বছর বয়সী ভিকি যাদব যেন ভুলে যেতে চান সেই সময়। অক্সিজেন লিকের খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন তিনি। কারণ তাঁর ঠাকুমা ভর্তি ওই হাসপাতালেই। ভিকির কথায়, "চর্তুদিকে তখন অক্সিজেন খোঁজ চলছে। এদিকে ঠাকুমার হাঁফ উঠেছে। চোখের সামনে সেই দৃশ্য দেখতে পারছিলাম না। অগত্যা ছুটে যাই মৃতদের বেডে। ছিনিয়ে আসি আসি অক্সিজেন। যদি ঠাকুমাকে বাঁচানো যায়। কিন্তু পারলাম কই"।
আরও পড়ুন, সংক্রমণ-মৃত্যু হারে ১৪৬ জেলার পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’, চিন্তায় সরকার
অবিস্মরণীয় এই স্মৃতিকে স্মরণ করতে চাইছেন না ভিকি। মৃত ২৪ রোগীর মধ্যে রয়েছে ভিকির ৬৫ বছর বয়সি ঠাকুমাও। কান্নায় ভেঙে পড়লেন ২৩ বছরের যুবক। চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, "নিজের লোককে চোখের সামনে মারা যেতে দেখা যে কত বেদনার তা বোঝানো যাবে না। অনেকে বলবেন যে আমার কাজ মনুষ্যত্বের কাজ ছিল না। কিন্তু যারা ততক্ষণে মৃত তাঁদের অক্সিজেন নিয়ে এসে সেই সময় জীবিতদের বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেছিলাম।"
আরও পড়ুন, Covid সংক্রমণে বিশ্বের রেকর্ড ভাঙল ভারত! ১ দিনে আক্রান্ত ৩ লক্ষের বেশি
শোকস্তব্ধ নাতির কথায়, "আমি যখন সকালে এসেছিলাম ঠাকুমাকে দেখতে তখন দেখি যে পর্যাপ্ত অক্সিজেন নিতে পারছে না। আমি হাসপাতালের কর্মীদের তা জানাই। প্রথমে তাঁরা কেউ পাত্তাই দেয়নি। পরে লিক ধরা পড়ে। তবে যখনই এই ঘটনা সামনে আসে তখন ক্রিটিকাল রোগীদের জন্য জাম্বো সাইজের অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করে স্টাফেরা।"
কিন্তু তা যে পর্যাপ্ত ছিল না, ২৪ মৃতদেহ তা বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। নাসিকের জাকির হুসেন হাসপাতালে অন্তত ১৭১ জন রোগীর চিকিৎসা চলছিল। এরমধ্যে ৩১ জন রোগীকে অন্য হাসপাতালে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলেও বাকিরা হাসপাতালেই ছিলেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মৃত রোগীদের মধ্যে ১০ জন ঘটনার সময় ভেন্টিলেশনে ছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকেই এই ঘটনায় মারা গিয়েছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন