বিলকিস বানো মামলার আসামিদের মুক্তির বিরুদ্ধে করা আবেদনের শুনানি আজ সুপ্রিম কোর্টে। উভয় পক্ষের যুক্তি শোনার পরে, সুপ্রিম কোর্ট গুজরাট সরকারকে নোটিশ জারি করেছে। ১১ দোষীর মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত মামলায় গুজরাত সরকারকে বৃহস্পতিবার নোটিস দিল সুপ্রিম কোর্ট। ১১ ধর্ষকের মুক্তি নিয়ে গুজরাত সরকারকে জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় ১১ দোষীকে যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আগামী দু’সপ্তাহ পর আবার এই মামলার শুনানি হবে। উল্লেখ্য, গোধরা ঘটনার পর গুজরাটে দাঙ্গা শুরু হয় এবং এই দাঙ্গায় বিলকিস বানার পরিবারের সাত সদস্য নিহত হয়। শুধু তাই নয়, বিলকিস বানোকেও গণধর্ষণ করেছিল দাঙ্গাকারীরা। ১ লা জানুয়ারী, ২০০৮-এ সকল আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলেও এখন তারা মুক্তি পেয়েছে। ২১ শে জানুয়ারী, ২০০৮-এ, মুম্বাইয়ের একটি বিশেষ সিবিআই আদালত হত্যা এবং গণধর্ষণ মামলায় ১১ অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। পরে বম্বে হাইকোর্ট তার সাজা বহাল রাখে। দোষীরা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলে ছিলেন, যার পরে তাদের মধ্যে একজন তার অকাল মুক্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। মওকুফ নীতির অনুসারে তাদের মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার। এনিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগে সব বিরোধী দলগুলি।
২০০২ গুজরাট দাঙ্গার সময়ে বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের আরও ৭ জনকে হত্যা করার অভিযোগে ২০০৮ সালে মুম্বইয়ের এক বিশেষ সিবিআই কোর্ট অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। বিলকিস বানো, তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল এবং তার পরিবারের সাত সদস্যকে দাঙ্গাকারীরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
একজন নারীকে দেওয়া ন্যায়বিচারের কী এটাই শেষ: বিলকিস বানো
বিলকিস বানো আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, "যখন শুনলাম ১১ জন অপরাধী যারা আমার পরিবার ও আমার জীবন ধ্বংস করেছে এবং আমার ৩ বছরের মেয়েকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে, তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে তখন আমি সম্পূর্ণ নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি এখনও হতবাক. আজ আমি শুধু বলতে পারি- কোন নারীর জন্য এভাবে বিচার শেষ হতে পারে কিভাবে? আমার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমার আস্থা ছিল। আমি সিস্টেমের উপর আস্থা রেখেছিলাম এবং ধীরে ধীরে আমার ট্রমা নিয়ে বাঁচতে শিখছিলাম। এই আসামিদের মুক্তি আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে এবং ন্যায়বিচারের প্রতি আমার বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমার দুঃখ এবং আমার নড়বড়ে বিশ্বাস শুধু আমার জন্য নয়, প্রত্যেক নারীর জন্য যারা বিচারের জন্য আদালতে লড়ছে"।
আরও পড়ুন: < রাজা সিংয়ের জামিনের বিরোধীতায় ধুন্ধুমার, হায়দ্রাবাদ জুড়ে বিক্ষোভে আটক শতাধিক বিক্ষোভকারী >
বিলকাস বানোর দোষীদের মুক্তি দেওয়ার গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে একটি পিআইএল শুনতে রাজি হয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সিপিএম নেতা সুভাষিণী আলি, লেখক রেবতী লাল এবং মানবাধিকার কর্মী রূপ রেখা ভার্মা এই আবেদনটি দায়ের করেছেন।আবেদনকারীরা বলছেন যে পুরো বিষয়টি সিবিআই তদন্ত করেছে, তাই গুজরাট সরকার অপরাধীদের একতরফা রক্ষা কবচ দিতে পারেনা। ফৌজদারি আইনের ৪৩৫ ধারার অধীনে, রাজ্য সরকারের জন্য এটির জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে পরামর্শ করা বাধ্যতামূলক।
২০০৮ সালে, একটি বিশেষ সিবিআই আদালত ১৩ অভিযুক্তের মধ্যে ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ২০১৭ সালে, বোম্বে হাইকোর্টও ট্রায়াল কোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। গুজরাট সরকার শাস্তির মেয়াদে দোষীদের ভাল আচরণের ভিত্তিতে এক সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৫ অগাস্ট ১১ আসামিকে মুক্তি দেওয়া হয়।