দেশে সমকামিতা কি অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা হবে নাকি সমকামীদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলবে? এর দিশা আগামিকাল মানে বৃহস্পতিবারই মিলতে পারে। ব্রিটিশ যুগের সেই বিতর্কিত আইন ৩৭৭ ধারার আদৌ বৈধতা রয়েছে কিনা তা নিয়ে কালই রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করা হয়েছিল। সেই বহুপ্রতিক্ষিত মামলারই কাল রায় দিতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট। ৩৭৭ ধারা নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ।
অন্যদিকে, তাঁর অবসরগ্রহণের আগে ৩৭৭ ধারার মতো অন্যতম মামলার রায় শোনাতে চলেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চ এই মামলার রায় জানাবে। আগামী মাসের ২ তারিখই দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর নেওয়ার কথা দীপক মিশ্রের।
প্রথমে আবেদনকারীদের থেকে জবাব চাওয়ার জন্য স্থগিতাদেশ চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। পরে ৩৭৭ ধারা নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তার ভার সুপ্রিম কোর্টের উপরই ছেড়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয় যে, ৩৭৭ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা আছে কিনা তা বিবেচনা করে দেখবেন কয়েকজন বিচারপতি। ২০১৩ সালের এ সংক্রান্ত রায়ের পুনর্বিবেচনা করতে গিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের তরফে জানানো হয়েছিল যে, পাঁচ ব্যক্তির পিটিশনের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন,১৫ নয়, ১০টি নথির মাধ্যমে এন আর সি-তে নাম তুলতে পারবেন আসামের ৪০ লাখ বাসিন্দা, মত শীর্ষ আদালতের
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ৩৭৭ ধারা অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট। পরবর্তীকালে দিল্লি হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্চ জানিয়ে মামলা ওঠে সুপ্রিম কোর্টে। সেসময়, দেশের শীর্ষ আদালতে দিল্লি হাইকোর্টের রায় খারিজ হয়ে যায়। যার জেরে আবারও হতাশ হয় এলজিবিটি সম্প্রদায়। শুধু তাই নয়, ওই সময় ৩৭৭ ধারা নিয়ে সংসদের কোর্টে বল ঠেলে দেওয়া হয়। সরকারই এ নিয়ে আইন তৈরি বা বাতিল করতে পারে বলে জানানো হয় সর্বোচ্চ আদালতের তরফে। অন্যদিকে, গত বছর গোপনীয়তা নিয়ে রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয় যে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। সুপ্রিম কোর্টের এহেন মন্তব্যের পরই নতুন করে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষরা।
৩৭৭ ধারা কী? কেউ যদি প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে পুরুষ, নারী বা জন্তুদের সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হন, তবে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা বা ১০ বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে। একইসঙ্গে জরিমানাও করা হতে পারে। কোনও পুরুষ বা মহিলা একই লিঙ্গের কারও সঙ্গে যৌন সংসর্গ করলে, তাও অপরাধ বলে গণ্য করা হয় এই আইনে। কেননা, সমলিঙ্গের মধ্যে যৌন সম্পর্কও প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।