প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে অনুষ্ঠান বয়কট করলেন শ্রীনগরের সাংবাদিকরা। ২৬ জানুয়ারি শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর স্টেডিয়ামে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে দেশ ও বিদেশের মোট ৬ জন সাংবাদিককে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। সিআইডি রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই সাংবাদিকদের সেদিনের অনুষ্ঠানে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। তারই প্রতিবাদে এদিন সরব হন সাংবিদাকরা। পুলিশি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এদিন উপত্যকায় মিছিল করেন সাংবাদিকরা।
ঠিক কী ঘটেছে? জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ওই ৬ সাংবাদিককে ঢুকতে না দেওয়া নিয়ে ‘নেতিবাচক’ রিপোর্ট(অ্যাডভার্স রিপোর্ট) পেশ করেছে সিআইডি। ওই সাংবাদিকদের যাতে অনুষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া হয়, সেই মর্মে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে সিআইডি। যদিও ওই ৬ জন সাংবাদিকের কাছে জম্মু-কাশ্মীর সরকারের সংস্কৃত দফতরের বৈধ নথি রয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ ছিল অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস টেলিভিশন(এপিটিএন)-এর ব্যুরো চিফ মেহরাজউদ্দিন ও ভিডিও সাংবাদিক উমর মেহরাজের নাম। এছাড়াও এএফপির চিত্র সাংবাদিক তাওসিফ মুস্তাফা, এএনআই ব্যুরো চিফ বিলাল আহমেদ ভাট, রয়টার্সের চিত্র সাংবাদিক দানিশ ইসমাইল ওয়ানি ও দৈনিক কাশ্মীর উজমার চিত্র সাংবাদিক আমন ফারুখের নাম রয়েছে চিঠিতে।
আরও পড়ুন, প্রজাতন্ত্র দিবসে উপত্যকায় জঙ্গি নিকেশ সেনার
এ ঘটনা প্রসঙ্গে দ্য সানডে এক্সপ্রেসকে ডিজিপি মুনির খান বলেন, ‘‘বিষয়টি জানার পরই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছি এসএসপি সিকিউরিটির থেকে।’’জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের নিরাপত্তা বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, সিআইডির রিপোর্ট মেনেই তাঁরা পদক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘যাচাই পর্ব খতিয়ে দেখে সিআইডি। কারও বিরুদ্ধে সিআইডি নেতিবাচক রিপোর্ট দিলে, আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের অনুষ্ঠানে যেতে দিই না।’’ জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি দিলবাগ সিং দ্য সানডে এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘‘এধরনের কোনও রিপোর্ট পাইনি। জম্মুতে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলাম।’’
এ ঘটনায় স্তম্ভিত ওই সাংবাদিকরা। এ প্রসঙ্গে এএফপি-র তাওসিফ মুস্তাফা বলেন, ‘‘সকাল ৯টা নাগাদ অনুষ্ঠানস্থলের গেটে যাই। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের নিরাপত্তা বিভাগের ইস্যু করা পাস দেখাই। এরপরই আমায় অপেক্ষা করতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর, নিরাপত্তা আধিকারিকরা জানান, অনুষ্ঠানস্থলের ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই। ২৮ বছরের কেরিয়ারে এই প্রথমবার এমন অভিজ্ঞতা হল কাশ্মীরে।’’ রয়টার্সের দানিশ ইসমাইল ওয়ানি বলেছেন, ‘‘দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে আমি এই পেশায় রয়েছি। আমার কাছে পাসপোর্ট রয়েছে। জানি না কেন আমার বিরুদ্ধে নেতিবাচক রিপোর্ট দেওয়া হল।’’
আরও পড়ুন, Republic Day Parade 2019: রাজপথের কুচকাওয়াজে প্রথমবার আইএনএ-র প্রবীণ যোদ্ধারা
এপিটিএনের মেহরাজউদ্দিন বলেছেন, ‘‘৪০ বছর ধরে এই পেশায় রয়েছি, প্রথমবার এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটল। কাশ্মীরের অনেক খারাপ পরিস্থিতির সময়ও আমরা কাজ করেছি। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। আমাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। খুবই দুর্ভাগ্যজনক। যদি কিছু নেতিবাচক পদক্ষেপ দেখে থাকেন, তাহলে তা আমাদের বলা উচিত।’’
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এহেন পুলিশি পদক্ষেপ প্রসঙ্গে সরব হয়েছে কাশ্মীর এডিটরস গিল্ড ও কাশ্মীর ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন। সাংবাদিকদের জীবন বিপজ্জনক বলে বর্ণনা করেছে তাঁরা। সাংবাদিকদের হেনস্থা করা একটা ‘প্যাটার্ন’ হয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা। জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপালের উপদেষ্টা কে বিজয় কুমার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এ ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে সরব হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলিও। পিপলস কনফারেন্স, কংগ্রেস, পিডিপি, ন্যাশনাল কনফারেন্স একযোগে নিন্দা জানিয়েছে এ ঘটনার।
Read the full story in English