বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের দ্বিতীয় দিন যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বিরাট মন্তব্য করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর মোদী বলেন, "দুই দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দ্রুতহারে বাড়ছে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ বিজ্ঞান এবং পরমাণু বিষয়ক আদানপ্রদানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব। বাংলাদেশ আমাদের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য সহযোগী।" হাসিনা যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, "আশা করব, ভারত-বাংলাদেশ দ্রুত বকেয়া বিষয়গুলি নিয়ে সুরাহার পথ বের করবে। তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি-সহ বাকি ইস্যুগুলি শীঘ্রই সমাধান হবে বলে আশা রাখছি।"
এদিন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর মোদী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার কথা বলেন। তার জন্য সন্ত্রাস এবং মৌলবাদ নিয়ে দুই পক্ষকে কড়া হতে হবে বলে বার্তা দেন মোদী। "একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে মাথায় রেখে যাঁরা আমাদের সমঝোতার জায়গায় আঘাত হানতে চায় সেই সব শক্তিকে যৌথভাবে ঠেকাতে হবে।" মোদী এদিন নাম না করে পাকিস্তান ও চিনকে খোঁচা দেন এই মন্তব্য করে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে যেভাবে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতন বেড়েছে, ধর্মীয় নিপীড়ণের ক্ষেত্রে মৌলবাদের বিষকে সমূলে উৎখাত করার জন্য এমন বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল।
এদিন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। একাধিক মউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। হায়দরাবাদ হাউসে দুই পক্ষের বৈঠক হয় এদিন। প্রসঙ্গত, সোমবারই পা রেখেছেন নয়াদিল্লিতে। চার দিনের ভারত সফরে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সফরের দ্বিতীয় দিনে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন হাসিনা। এদিন সকালে রাইসিনা হিলসে হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন হাসিনা।
সংবাদমাধ্যমকে হাসিনা বলেন, "ভারত আমাদের বন্ধু। যখনই ভারতে আসি, আমার খুব ভাল লাগে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যেভাবে সাহায্য করেছিল, যে অবদান রাখে তা নিয়ে বার বার মনে পড়ে। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। একে অপরকে সহযোগিতা করি আমরা।"
বস্তুত, আজ, মঙ্গলবার মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন হাসিনা। সেখানে একাধিক দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে তিস্তা জলবন্টন চুক্তি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের আগে সংবাদমাধ্যমকে হাসিনা বলেন, "খুব আশাব্যঞ্জক আলোচনার দিকে তাকিয়ে আছি। সেরকমই বৈঠক হবে বলে আশা রাখছি। আমাদের মূল লক্ষ্য হল আর্থিক ভাবে উন্নয়ন এবং আমাদের নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা নিবারণ। বন্ধুত্ব দিয়ে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। সেটাই আমরা সবসময় করি।"
প্রসঙ্গত, আজ বৈঠকে কুশিয়ারা নদীর জলবন্টন চুক্তি, রেলপ্রযুক্তি, রেল পরিচালনা প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান, মহাকাশ এবং সংবাদ সমন্বয় নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয় মোদী-হাসিনার। এর আগে সোমবারই দিল্লিতে পা রেখে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন হাসিনা। মঙ্গলবার, দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে দেখা করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার আজমের শরিফে মইনুদ্দিন চিস্তির দরগায় যাওয়ার কথা হাসিনার। তার পর ঢাকায় ফিরবেন তিনি।
আরও পড়ুন এবার দিল্লির ঐতিহাসিক রাজপথের নাম পাল্টে দিচ্ছে মোদী সরকার, কী নাম রাখা হচ্ছে?
চারদিনের সফরে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে না হাসিনার। তা নিয়ে আক্ষেপ করেছেন হাসিনা, এমনটাই সূত্রের খবর। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, "মমতা আমার বোনের মতো। ভেবেছিলাম দিল্লি এলে দেখা হবে। কোনও কারণে এ বার সেটা হল না। তবে তাঁর সঙ্গে যে কোনও সময় দেখা হতে পারে।"
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু পরিদর্শনের জন্য মমতাকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন হাসিনা। এবার দিল্লি এলেও হাসিনা-মমতা সাক্ষাৎ হচ্ছে না, এটাই আক্ষেপ বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর।