পাকিস্তানের তরফে কর্তারপুর করিডোরের ভূমি পূজার একদিন আগেই সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াঘা সীমান্ত পেরলেন নভজ্যোত সিং সিধু। গত সপ্তাহে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে সিধু জানিয়েছিলেন, এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। এরপর এক দিন আগেই 'বন্ধু' ইমরানের দেশে পা রাখলেন ভারতের এই প্রাক্তন ক্রিকেটার।
পাকিস্তানে অবস্থিত শিখ তীর্থস্থান গুরুদ্বার দরবার সাহিবে (বিশ্বাস করা হয়, আমৃত্যু এখানেই জীবনের শেষ কয়েক বছর কাটিয়েছিলেন গুরু নানক) পৌঁছনোর জন্য কর্তারপুর করিডোর নির্মাণকে ঘিরে সম্প্রতি ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত মিলেছে। তবে এর মধ্যেই এই ইস্যুকে নিয়ে কূটনৈতিক চাপানউতোরের পাশাপাশি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও প্রভাবিত হয়েছে। এক নজরে দেখা নেওয়া যাক ঘটনাক্রম-
১. ভারতের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত নেয় আন্তর্জাতিক সীমান্ত ডেরা বাবা নানক পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করবে ভারত। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাক প্রশাসন জানিয়ে দেয়, আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে কর্তারপুরে অবস্থিত গুরুদ্বার দরবার সাহিব পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করবে তারা। সামগ্রিকভাবে এই পথই হল কর্তারপুর করিডোর।
২. ভারতীয় প্রকল্পটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠান হয় ২৬ নভেম্বর (গতকাল)। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং, কেন্দ্রীয় পরিবহনমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না সিধু। অনুষ্ঠানের সময় তিনি নির্বাচনমুখী মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করছিলেন।
আরও পড়ুন- জড়িয়ে ধরেছিলাম, রাফাল চুক্তি করিনি: সিধু
৩. ভারতের তরফে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, কর্তারপুর করিডোর দু'দেশের মানুষের মধ্যে সেতু হিসাবে কাজ করবে এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ দেখাবে। তবে বলতে উঠে পাকিস্তানকে তীব্র আক্রমণ করেন পঞ্জাবের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা একদা সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং। সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার জন্য তিনি পাকিস্তানকে নিশানা করেন।
৪. ভারতের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ওই এলাকায় আসেন সিধু। তিনি দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে তীর্থস্থান দর্শন করেন এবং প্রার্থনা করেন।
৫. ২৮ নভেম্বর পাকিস্তানের তরফে কর্তারপুর করিডোরের ভূমি পূজা। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
৬. সুষমা স্বারাজ জানান, ওই দিন একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি আগে থেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছেন। ফলে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে পাকিস্তানের ভূমি পূজায় অংশ নেবেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী হরসিমরত কৌর বাদল এবং হরদীপ সিং পুরি।
আরও পড়ুন- মোদীর সমালোচক সিধুকে সিআইএসএফ নিরাপত্তা দিন, রাজনাথকে আর্জি কংগ্রেসের
৭. ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং জানিয়েছেন, "আমি কর্তারপুরে যেতে চাই এবং নানক সাহিব ও পাঞ্জা সাহিবও দর্শনও করতে ইচ্ছুক। কিন্তু, পাকিস্তান আমাদের মারা বন্ধ না করলে, আমি যেতে পারব না"।
৮. পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে ইমরান খানের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তুমুল বিতর্কে জড়িয়েছিলেন সিধু। সে সময় পাক সেনা প্রধানের সঙ্গে তাঁর আলিঙ্গন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল গেরুয়া শিবির। পরে সিধু দাবি করেছিলেন, পাক সেনা প্রধান জেনারেল বাজওয়াকে তিনি কর্তারপুর সীমান্ত খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন এবং তিনিও আন্তরিকতা দেখিয়েছিলেন। আরও পড়ুন- পাক মন্ত্রিসভায় যোগ দিন সিধু, কটাক্ষ বিজেপির
৯. পাকিস্তানের অনুষ্ঠানে এবারও সিধুর অংশগ্রহণ ঘিরে ফের বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কূটনৈতিক মহল।
Read the full story in English