ভারতের সংসদ সদস্যদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের জের, সিঙ্গপুরের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে কড়া বার্তা কেন্দ্রের। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের অভিযোগ ছিল, ভারতের লোকসভার প্রায় অর্ধেক সদস্যের বিরুদ্ধেই ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে। 'নেহরুর ভারত' থেকে দেশটির গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পতন হচ্ছে বলেও অভিযোগ সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর। ভারত সম্পর্কে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে বেজায় চটেছে দিল্লি। তড়িঘড়ি এদেশে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার সাইমন ওংকে তলব করে বিদেশমন্ত্রক। "সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য অযাচিত" বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সে দেশের রাষ্ট্রদূতকে এমনই জানানো হয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
সিঙ্গাপুর ভারতের বন্ধু দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। দুই দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কৌশলগত অংশীদার এমন বন্ধু দেশের দূতকে ডেকে পাঠানোর বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নয়াদিল্লির জন্যও বেশ অস্বস্তির কারণ ছিল। তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যের জেরে এছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না বলেই মনে করছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সংসদে বিতর্ক চলাকালীন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর বিষয়ে বলতে শুরু করেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনে কীভাবে কাজ করা উচিত তা নিয়েই বিতর্কসভায় বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন, ''বেশিরভাগ দেশ আদর্শ এবং মহৎ মূল্যবোধের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। তবে প্রায়শই তা হয় না। প্রতিষ্ঠিত কয়েকজন নেতা কিছু ভাবনা তৈরি করেন, যা কয়েক দশক এবং কয়েক প্রজন্ম ধরে চলে। ধীরে ধীরে সেই জিনিসগুলি পরিবর্তিত হয়।''
আরও পড়ুন- দেশের কোভিড-গ্রাফ নিম্নমুখী, বড়সড় স্বস্তি অ্যাক্টিভ কেসে
তিনি আরও বলেন, ''নেতারা, যাঁরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন এবং জয় করেছেন, তাঁরা প্রায়শই অসাধারণ সাহস, অপার সংস্কৃতি এবং অসামান্য ক্ষমতার অধিকারী হন। তাঁরা আগুনের ফুলকির মধ্য দিয়েও বেরিয়ে এসেছেন। মানুষ ও জাতির নেতা হিসেবে নিজেরের প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমনই কিছু মানুষ হলেন, ডেভিড বেন-গুরিয়ানস, জওহরলাল নেহরু।''
সংসদে ৪০ মিনিটের ভাষণে সিঙ্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী লি আরও বলেন, ''নেহরুর ভারত এখন এমন হয়ে উঠেছে যে মিডিয়া রিপোর্ট বলছে, ভারতের লোকসভার প্রায় অর্ধেক সাংসদের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ সহ ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে। যদিও এটাও বলা হয়, যে এই সব অভিযোগের বেশিরভাগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।'' ভারত সম্পর্কে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পাল্টা পদক্ষেপ করতেও দেরি করেনি বিদেশ মন্ত্রক। ক্ষুব্ধ দিল্লি তড়িঘড়ি এদেশে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। ভারত যে তাঁদের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে ভালোভাবে নিচ্ছে নানা, স্পষ্ট ভাষায় তা জানিয়েও দেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে রাষ্ট্রদূতকে।
Read story in English