উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে লকডাউনে ইঁটভাটার শ্রমিকরা।
ভারতে করোনার প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছুঁই ছুঁই। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের কাছে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির আর্জি জানিয়েছে একাধিক রাজ্য। পরিস্থিতি বিচারে সেই আর্জি মোদী সরকারের বিবেচনাধীন বলে জানা গিয়েছে। সূত্র মারফত খবর পাওয়া যাচ্ছে, 'লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে রাজ্যগুলির মতই ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্র আশা করছে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি হলে সব রাজ্যই তা মেনে চলবে।'
Advertisment
২১ দিনের কঠোর লকডাউনের পর তার মেয়াদ বৃদ্ধি কতটা সম্ভব? সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ এপ্রিল দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানেই সব দিক খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। ফসলের মরসুম হওয়ায় ইতিমধ্যেই লকডাউনের আওতা থেকে কৃষিকাজ ও কৃষিপণ্যকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ছাড়া রয়েছে প্রথম থেকেই। তবে মানুষের হয়রানি চলছেই। এবিষয়ে সরকারি সূত্র জানাচ্ছেন, 'তথ্য মানুষের কাছে পৌছচ্ছে না বলে বিভান্তি বাড়ছে। কৃষিতে রাজ্যগুলিকেও কেন্দ্রের তরফে কাজ করার বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে।'
দেশের অন্তত সাতটি রাজ্য, যেগুলিতে নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ১,৩৬৭ – অর্থাৎ ভারতের মোট আক্রান্তের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ – রাজ্যগুলি সোমবার আভাস দেয় যে ১৪ এপ্রিল ২১ দিনের রাষ্ট্রীয় লকডাউন উঠে গেলেও কিছু জায়গায় নিষেধাজ্ঞা জারি রাখবে তারা। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও আগেই জানিয়েছিলেন যে তাঁর রাজ্যে তিনি লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষপাতী। এবার মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, আসাম, ছত্তিসগড় এবং ঝাড়খণ্ডও ইঙ্গিত দিয়েছে যে আগামী মঙ্গলবার লকডাউন পুরোপুরি তুলে দিচ্ছে না তারা। প্রথমে লকডাউন তুলে নেওয়া কথা বললেও সেই দাবি থেকে সরে এসেছেন মধ্যপ্রদেসের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যে লকডাইনের মেয়াদ বৃদ্ধির পক্ষে তিনি। অনেক রাজ্য আবার জানিয়েছে যে, করোনা হটস্পট এলাকায় লকডাউন জারি থাকুক।
Advertisment
সরকারি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ভারতে করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়নি।২৮৪ জেলা থেকে করোনা পজেটিভের রিোর্ট এসেছে। দেশের ৬০ শতাংশ জেলাই সুরক্ষিত। ফলে ১৪ এপ্রিলের পর কোঠের বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করতে পারে কেন্দ্র। তবে, তাতে ব্যবসা বাণিজ্য খুব একটা করা সম্ভব নয়, কিন্তু, মানুষের হয়রানি কমতে পারে।
লকডাউনটি বাড়ানো হচ্ছে বলে যে জল্পনা চলছে তা দূর করতে কেন্দ্রীয় সরকার সচেষ্ট হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লভ আগারওয়াল এক সপ্তাহ আগেই লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, 'একাধির রাজ্য থেকে লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি এসেছে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও। সবদিক খতিয়ে দেকা হচ্ছে।'
লকডাউনের মেয়াদ ফুরোলেই সামাজিক দূরত্ব পবজায় রাখা সমস্যার হবে। ফলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আর এটাই চিন্তা বাড়াচ্ছে কেন্দ্রের। মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, আসাম, ছত্তিসগড়, ঝাড়খণ্ড লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির পক্ষে হলেও অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে কিছুটা দ্বিধায় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহেলট। তিনি পর্যায়ক্রমে লকডাউন শিথিলের পক্ষপাতী। তিনি বলেছেন, '২১ দিন ধরে সব বন্ধ। অর্থনীতি ধসে পড়ছে। কিন্তু, জীবন বিপন্ন করে কিছু করা যাবে না।'
লকডাউন নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নেতৃত্বে বেশ কয়েকবার মন্ত্রীগোষ্ঠীর বৈঠক হয়েছে। আবারও হবে। সেকানের বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনার পর প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেওয়া হবে। সূত্রে জানাচ্ছে যে, 'লকডাউনের মেয়াদ শেষের পর কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে মন্ত্রীগোষ্ঠীর বৈঠকে। লকডাউন ফঠতে পারে, আবার চলতেও পারে। প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে, আমাদের সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।'