সালটা ২০১২। অরুণাচলপ্রদেশের ইদু মিশমি উপজাতিরা একদিন ডিবং উপত্যকায় প্রথম খোঁজ পেল তিনটি বাঘের ছানার। অমনি খবর দেওয়া হল বন দফতরকে। ওরকম ঠাণ্ডার দেশে বাঘ কী ভাবে থাকে, প্রশ্ন উঠছিল স্থানীয়দের মনে। পুরাণে উল্লেখ থাকলেও ভূ-পৃষ্ঠ থেকে অত উচ্চতায় বাঘের বসবাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তো পাওয়া যায়নি আগে।
হ্যাঁ, তবে ১০০ বছর আগে, ২০১২ সালে ক্যাপ্টেন এফ এম বেইলি নামের এক ভারতীয় সেনা মিশমি পাহাড়ের গায়ে বাঘের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেছিলেন বটে। তারপর বহুদিন কেউ সেখানে বাঘের দেখাও পায়নি, তাই নতুন করে খোঁজও পড়েনি। কিন্তু ২০১২ সালে পাহাড়ি উপত্যকায় উপজাতিরা বাঘের বাচ্চা দেখতে পেলে, নতুন করে বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরু হয়।
ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং ন্যাশনাল টাইগার কনজার্ভেশন অথোরিটি যৌথভাবে সমীক্ষা চালিয়ে অবশেষে মিশমি উপত্যকায় বাঘেদের উপস্থিতির প্রমাণ পায়। সমীক্ষা আয়োজক দলের সদস্য গোপী বলেন, "২০১৪ তে আমাদের ক্যামেরায় আমরা বাঘের আংশিক ছবি তুলতে পেরেছিলাম। মিশমি উপত্যকা, দেশের সবচেয়ে উঁচু অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম, যেখানে বাঘেদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে"।
আরও পড়ুন, সিংহের আক্রমণে মৃত্যু, গির অরণ্যে পর্যটক প্রবেশ নিষেধ
তিন বছর ধরে মিশমি উপত্যকার জঙ্গলে ১০৮ খানা ক্যামেরা লাগিয়ে ১১ টি আলাদা আলাদা বাঘের ছবি তোলা গিয়েছে। এদের মধ্যে দুটি আবার বাচ্চা বাঘ। তিন এবং সাড়ে তিন হাজার মিটার উচ্চতায় দু'দুটি পুরুষ বাঘের অস্তিত্ব ক্যামেরাবন্দি করা গিয়েছে। পূর্ব হিমালয়ে এই ঘটনা এই প্রথম। পশ্চিম হিমালয়ের ভুটান কিমবা উত্তরাখণ্ডে ৪০০০ হাজার মিটার উচ্চতাতেও বাঘেরা বসবাস করে।
সমীক্ষা আয়োজক দলের সদস্য অধিকারীমায়ুম জানিয়েছেন, রাশিয়ার পর এই মিশমি উপত্যকাতেই প্রথম বাঘের ছবি ক্যামেরাবন্দি করা গিয়েছে। সারা পৃথিবীতে যে ৯টি প্রজাতির বাঘ রয়েছে, তাদের মধ্যে তিনটি প্রায় বিলুপ্তপ্রায়।
সমীক্ষায় ৪০০০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র সাড়ে তিনশ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলে ছানবিন করা হয়েছে। তাই সমীক্ষকদের দৃঢ় বিশ্বাস, মিশমি উপত্যকায় আরও বাঘ রয়েছে। এখানকার বাঘেরা সব রয়্যাল বেঙ্গল প্রজাতির।
এখনও অনুমতি মেলেনি, তবু খুব শিগগির পরবর্তী সমীক্ষা শুরু করলে উপত্যকার আরও উচ্চতায় ডোরাকাটাদের রাজকীয় উপস্থিতি টের পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী সমীক্ষকরা।
Read the full story in English