দেশের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে এরকম ঘটনা বিরল। বিচার পদ্ধতিতে ত্রুটি খুঁজে পেয়ে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে বেকসুর খালাস করল শীর্ষ আদালত।
হত্যা এবং ধর্ষণের দায়ে যাযাবর সম্প্রদায়ের ৬ জনকে ১৬ বছর আগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল আদালত।
২০০৩ সালের ৫ জুন মহারাষ্ট্রের জালনা জেলার ভোকারধনে এক পরিবারের ৫ সদস্যকে হত্যা এবং এক সদস্যকে ধর্ষণের দায়ে অঙ্কুশ মারুতি শিন্ডে, রাজ্য আপ্পা শিন্ডে, অম্বাদাস লক্ষ্মণ শিন্ডে, রাজু মাসু শিন্ডে, বাপু আপ্পা শিন্ডে এবং সুরেশ শিন্ডেকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি একে সিক্রি, বিচারপতি এস আব্দুল নাজির এবং বিচারপতি এম আর শাহের বেঞ্চ নতুন করে তদন্ত করার নির্দেশ দেন সম্প্রতি।
আরও পড়ুন, ‘অপরাধীর মন বদলেছে’, কবিতা শুনে মৃত্যুদণ্ড লাঘব আদালতে
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানিয়েছে আগের তদন্ত যথাযথ ছিল না। তাছাড়া অভিযুক্তদের মধ্যে একজন (সেই সময়ে নাবালক থাকায়) ছাড়া বাকি ৪ জন ১৬ বছর জেল খেটেছে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানিয়েছে "আগের তদন্তকারী সংস্থা যে ভাবে তদন্ত চালিয়েছে, তা নিরপেক্ষ নয়"। শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ মহারাষ্ট্র সরকারকে তিন মাস সময় দিয়েছে। তার মধ্যে রাজ্য সরকারকে চিহ্নিত করতে হবে, কে বা কারা এই গাফিলতি করেছে। রাজ্য সরকারের সেই সমস্ত আধিকারিক যদি এখনও দায়িত্বে বহাল থাকেন, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
ত্রম্বক সাতোতে, তাঁর মেয়ে, দুই ছেলে এবং ভ্রাতুষ্পুত্র কে খুন করার দায়ে যাযাবর সম্প্রদায়ের ৫ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আদালত।
আরও পড়ুন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আজ শেষকৃত্য বড়মার, শোকের ছায়া ঠাকুরনগরে
নিহতর পরিবার সে দিন নৈশভোজ সেরে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ঘড়েই গল্প করছিলেন। সাত থেকে আটজন দুষ্কৃতি এসে হতা করে পালায়। দুষ্কৃতিরা ভেবেছিল সবাই মৃত, কিন্তু ত্রম্বক সাতোতের তৃতীয় সন্তান মনোজ এবং স্ত্রী বেঁচে যান। হত্যার দু দিন পর ত্রম্বকের স্ত্রী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। দুষ্কৃতিদের ছবি দেখে ৪ জনকে চিহ্নিত করেন তাঁর স্ত্রী। শীর্ষ আদালত সম্প্রতি জানিয়েছে আসলে যারা হত্যা করেছিলেন, তারাই নাকি পার পেয়ে গিয়ে মুক্ত রয়েছে।
ত্রম্বক সাতোতের স্ত্রী যাদের দুষ্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, আর যারা ১৬ বছর জেল কেটেছে তারা এক নন। অতএব আদালত জানিয়েছে, "১৭৩ (৮) ধারা অনুযায়ী এই ঘতনার ফের তদন্ত প্রয়োজন"।
২০০৬ সালের জুন মাসে দায়রা আদালত ওই ৬জনের ৩জন কে ফাঁসির সাজা শোনায়। বাকি ৩ জনকে জরিমানা সমেত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আবেদন করে ওই তিন সাজাপ্রাপ্ত। ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর দায়রা আদালতের দেওয়া সাজা পুনর্বিবেচনা করে শীর্ষ আদালত। তখনই অভিযুক্ত এবং সরকার, দুপক্ষের আবেদন নতুন করে শুনানিতে রাজি হয় সুপ্রিম কোর্ট।