এই মুহূর্তে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে চর্চিত নাম ফিরোজ খান, ধর্ম- মুসলিম, অধ্যাপনার বিষয়- সংস্কৃত। ঝামেলার সূত্রপাত সেখান থেকেই। এবার সেই আগুনেই ঘৃতাহুতি দিলেন সংস্কৃত বিদ্যা ধর্ম বিজ্ঞান (এসভিডিভি)-এর অধ্যাপক এবং সংস্কৃত স্কলাররা। সংস্কৃতে ডক্টরেট ফিরোজ খানের নিয়োগ বাতিলের বিষয়ে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও লেখেন তাঁরা।
আরও পড়ুন-‘সংস্কৃত পড়তে গিয়ে কখনই মনে হয়নি আমি মুসলমান, কিন্তু এখন…’
এ বিষয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে যোগাযোগ করা হলে এসভিডিভির প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান তথা ১৯৯১ সালে সংস্কৃতে সাহিত্যে অকাদেমি প্রাপ্ত রেবা প্রসাদ দ্বিবেদী বলেন, “যারা অ-হিন্দু এই অধ্যাপককে এখানে নিয়োগ করেছেন, সেই অধ্যাপক নিজেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। এই নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করা হোক। এটাই আমাদের একমাত্র দাবি। একজন অ-হিন্দু অধ্যাপক কখনই এসভিডিভিতে পড়াতে পারেন না।”
আরও পড়ুন- বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় যা নিয়ে উত্তপ্ত, বেলুড় মঠে তাই ‘স্বাভাবিক’
এদিকে, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে ফিরোজ বলেন, “সারা জীবন ধরে আমি সংস্কৃত পড়ে এসেছি। কোথাও মনে হয়নি, আমি মুসলিম বলে সংস্কৃত আমি পড়তে পারব না। এবার যখন সংস্কৃত পড়াতে গেলাম তখন তার মধ্যে ধর্ম নিয়ে আসা হল।” প্রসঙ্গত, জয়পুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্ত্রী (স্নাতক), শিক্ষাশাস্ত্রী (বি.এড), আচার্য (স্নাতকোত্তর) এবং ২০১৮ সালে পিএইচডিও সম্পূর্ণ করেছেন ফিরোজ খান। এমনকী নেট এবং জেআরএফ-ও সম্পূর্ণ করেন কৃতী ছাত্র ফিরোজ। তিনি বলেন, “আমি ক্লাস টু থেকে আমার মহল্লাতেই সংস্কৃত পড়া শুরু করি। সেখানে প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিমের বাস। কোনও দিন আমাদের সমাজ কিংবা মৌলবিরা আমাকে এ ব্যাপারে বাধা দেননি। আমি কোরানের চেয়ে অনেক বেশি সংস্কৃত জানি। আমি মুসলিম জেনেও আমার সংস্কৃতের জ্ঞানের প্রশংসা করেছেন হিন্দুরা।” এক নিঃশ্বাসে বললেন ফিরোজ। তাঁর বাবা রমজান খানও ছিলেন সংস্কৃতের ছাত্র।
যদিও ধর্নায় শামিল ছাত্রদের মধ্যে এবিভিপি, কেন্দ্রীয় ব্রাহ্মণ মহাসভা এবং আরএসএস-এর সদস্য শশীকান্ত মিশ্র, শুভম তিওয়ারী এবং চক্রপানি ওঝাদের বক্তব্য, “যদি কেউ আমাদের ধর্মের না হয়, তাহলে সে কীভাবে আমাদের সংস্কৃতি বুঝবে? কীভাবে তিনি আমাদের ধর্মকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন?”
এই দাবি মানতে নারাজ ফিরোজ। তিনি বলেন, “যাঁরা বলছেন আমি মুসলমান হয়ে হিন্দুত্ববাদ পড়াতে পারব না, তাঁদের আমি বলব, আমি সংস্কৃত ভাষা সাহিত্যের খুঁটিনাটি ছাত্রছাত্রীদের কাছে তুলে ধরি। যেমন অভিজ্ঞান শকুন্তলম, উত্তর রামচরিতম্ ইত্যাদি। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্কই নেই।”
Read the full story in English