এগারো দিন আগে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিদ্যা ধর্ম বিজ্ঞান (এসভিডিভি)-এ যোগদান করছেন সংস্কৃতে ডক্টরেট ফিরোজ খান। কিন্তু এরপর থেকেই কার্যত লুকিয়ে রয়েছেন তিনি। বেশ কিছু দিন ধরে বন্ধ মোবাইল ফোনও। এদিকে, ফিরোজ খান বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পর থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সমস্ত ক্লাস। সোমবার থেকে যজ্ঞভূমি রচনা করে ধর্নায় বসেছেন এসভিডিভি বিভাগের ২০ শিক্ষার্থী। কারণ একটাই- অধ্যাপক ফিরোজ খানের ধর্ম ইসলাম।
আরও পড়ুন- মমতাকে চরম জবাব মুসলিম সংগঠনের নেতার
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে ফিরোজ বলেন, "সারা জীবন ধরে আমি সংস্কৃত পড়ে এসেছি। কোথাও মনে হয়নি, আমি মুসলিম বলে সংস্কৃত আমি পড়তে পারব না। এখন যখন সংস্কৃত পড়াতে গেলাম তখন বিষয়টিতে ধর্মে নিয়ে আসা হল।" প্রসঙ্গত, জয়পুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্ত্রী (স্নাতক), শিক্ষাশাস্ত্রী (বি.এড), আচার্য (স্নাতকোত্তর) এবং ২০১৮ সালে পিএইচডিও সম্পূর্ণ করেছেন ফিরোজ খান। এমনকী নেট এবং জেআরএফ-ও সম্পূর্ণ করেন কৃতী ছাত্র ফিরোজ। তিনি বলেন, "আমি ক্লাস টু থেকে আমার মহল্লাতেই সংস্কৃত পড়া শুরু করি। সেখানে প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিমের বাস। কোনও দিন আমাদের সমাজ কিংবা মৌলবীরা বাধা দেননি আমায়। আমি কোরানের থেকে সংস্কৃত অনেক বেশি জানি। আমি মুসলিম জেনেও আমার সংস্কৃতের জ্ঞানের প্রশংসা করেছেন হিন্দুরা।" এক কথাগুলি এক নিঃশ্বাসে বলে চললেন ফিরোজ। তাঁর বাবা রমজান খানও ছিলেন সংস্কৃতের ছাত্র।
আরও পড়ুন- ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের নামে ফাঁদ পাতছে মোদী সরকার
অন্যদিকে, ধর্নায় শামিল ছাত্রদের মধ্যে এবিভিপি, কেন্দ্রীয় ব্রাক্ষ্মণ মহাসভা এবং আরএসএস-এর সদস্য শশীকান্ত মিশ্র, শুভম তিওয়ারী এবং চক্রপানি ওঝাদের বক্তব্য, "যদি কেউ আমাদের ধর্মের না হয়, তাহলে সে কীভাবে আমাদের সংস্কৃতি বুঝবে? কীভাবে তিনি আমাদের ধর্মকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন?"
যদিও এই মন্তব্য মানতে নারাজ ফিরোজ। তিনি বলেন, "যাঁরা বলছেন আমি মুসলমান হয়ে হিন্দুত্ববাদ পড়াতে পারব না, তাঁদের আমি বলব, আমি সংস্কৃত ভাষা সাহিত্যের খুঁটিনাটি ছাত্রছাত্রীদের কাছে তুলে ধরি। যেমন অভিজ্ঞান শকুন্তলম, উত্তর রামচরিতম্ ইত্যাদি। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্কই নেই।" ফিরোজের পাশে দাঁড়িয়েছেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরাও। তাঁদের বক্তব্য, "যিনি ভালোভাবে পড়াতে পারবেন, সেইসব দক্ষ শিক্ষকরাই বিএউইচইউতে সুযোগ পেয়ে থাকেন। যারা এই বিরোধী কাজ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তির দাবি জানাব।''
আরও পড়ুন- জেএনইউ পড়ুয়াদের সংসদ ভবন অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জ
তবে পড়ুয়াদের এই দীর্ঘ সময়ের জন্য ধর্নায় বসার প্রসঙ্গে ফিরোজ বলেন, "ওরা যা বলছে একটা জায়গায় গিয়ে আমি সেটা মেনে নিচ্ছি যে বেদ, শাস্ত্র, জ্যোতিষ পড়ানোর ক্ষেত্রে আমি যদি হিন্দু হতাম তাহলে সেটা ভাল। কিন্তু আমি তো সংস্কৃত সাহিত্য পড়াই, যা সেখানে লেখা আছে আমি সেটাই পড়াই। তার সঙ্গে তো ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই।" তাহলে কী সামনে দাঁড়িয়ে সোজাসুজি লড়াই চালাবেন ফিরোজ? উত্তরে সংস্কৃত শিক্ষক বললেন, "আজ তাঁরা যা বলছে, আমি আশা করব ভবিষ্যতে সেই ভাবনায় বদল আসবে।"
Read the full story in English