বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) র্যাডারে ভারতে তৈরি চারটি কাশির সিরাপ! এই সিরাপগুলি ব্যবহারে ইতিমধ্যেই একটি সতর্কতা জারি করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। কেন এই সতর্কতা? WHO জানিয়েছে এই সিরাপগুলির মধ্যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পাওয়া গেছে, যা বিষাক্ত এবং সম্ভাব্য মারাত্মক। দিন কয়েক আগেই আফ্রিকায় ৬৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়। তারপরই এই কাশির সিরাপ ব্যবহারে সতর্কতা জারি করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এবার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্ক্যানারে থাকা সিরাপ নিয়ে মুখ খুলল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে এক অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানান হয়েছে এই কাশির সিরাপগুলি ভারতের কোথাও বিক্রি হয়নি।
বৃহস্পতিবার, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ডব্লিউএইচও-র বিবৃতিতে একটি আনুষ্ঠানিক জবাব দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে যে এই চারটি কাশির সিরাপ ভারতের কোথাও বিক্রি হয়নি। এই পণ্য রপ্তানির অধিকার শুধুমাত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের। স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে, “কোম্পানি এই সিরাপগুলি তৈরি করেছে এবং শুধুমাত্র গাম্বিয়াতে রপ্তানি করেছে। গাম্বিয়াতে রপ্তানি করা কাশির সিরাপ ভারতের কোথাও বিক্রি বা বিতরণ করা হয় না। কোম্পানি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই রিপোর্ট আসবে। তার ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করা হবে"।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেছে, সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (CDSCO) এর একটি প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে যে মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড হরিয়ানা সরকারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত। সংস্থা Promethazine Oral Solution BP, Cohexanaline Baby Cough Syrup, Macoff Baby Cough Syrup এবং Magrip N Cold Syrup এই চারটি কাশির সিরাপ তৈরি করেছে এবং এই কাশির সিরাপগুলি কেবলমাত্র গাম্বিয়াতেই রপ্তানি করা হয়। ভারতের অন্যত্র আর কোথাও এই সিরাপ বিক্রি করা হয়নি বলেই জানান হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে।
ডাব্লুএইচও বলেছে, “গাম্বিয়াতে যে ৬৬ জন শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে তার সঙ্গে সরাসরি এই কাশির সিরাপের যোগসূত্রের সম্ভাবনা রয়েছে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে”। মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ভারতে তৈরি চারটি কাশির সিরাপ নিয়ে সাবধানতা জারি করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এই চারটি সিরাপ হল প্রোমেথাজিন ওরাল সলিউশন, কোফ্যাক্সমালিন বেবি কফ সিরাপ, ম্যাকফ বেবি কফ সিরাপ এবং ম্যাগ্রিপ এন কোল্ড সিরাপ। এই সমস্ত সিরাপগুলি হরিয়ানার মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তৈরি।
আরও পড়ুন: < দিল্লির মদ কেলেঙ্কারি নিয়ে তৎপর ইডি! হায়দ্রাবাদ, পাঞ্জাবের ৩৫টি স্থানে হানা >
WHO-এর সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে যে চারটি পণ্যের প্রতিটির নমুনার বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, এই সিরাপগুলিতে ক্ষতিকারক ডায়েথিলিন গ্লাইকোল এবং ইথিলিন রয়েছে। যেগুলো সেবন করা মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
বিশেষ সতর্কতায় ডব্লিউএইচও বলেছে যে এই সমস্ত সিরাপ অনিরাপদ এবং সেগুলির ব্যবহারে বিশেষ করে শিশুদের গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও বলা হয়েছে যে এই সিরাপ খেলে পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন এবং কিডনির সমস্যার মত লক্ষণও দেখা দিতে পারে। যা অনেকক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
ডব্লিউএইচও বলেছে যে এই সিরাপগুলির গুণমান ল্যাবে বিশ্লেষণ না করা পর্যন্ত এই পণ্যগুলির সমস্ত ব্যাচকে অনিরাপদ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। যদিও এই পণ্যগুলির মধ্যে চারটি গাম্বিয়াতে শনাক্ত করা হয়েছে, তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে অন্যান্য দেশেও এই সিরাপ ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে। WHO আরও জানিয়েছে এই সিরাপ ইতিমধ্যেই যারা খেয়েছেন তাদের কোন রকম শারীরিক জটিলতা বা সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বেই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
সতর্কতায় ডব্লিউএইচও আরও বলেছে, যদি আপনার কাছে যদি এই সিরাপ থাকে তাহলে এটি দয়া করে ব্যবহার করবেন না। আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ যদি এই সিরাপ খেয়ে অসুস্থ বোধ করেন তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। একই সঙ্গে ঘটনাটি ন্যাশনাল রেগুলেটরি অথরিটি বা ন্যাশনাল ফার্মাকোভিজিল্যান্স সেন্টারে রিপোর্ট করার কথাও বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়ুস জানিয়েছেন যে ওই চারটি কাফ সিরাপের সঙ্গে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা এবং ৬৬জন শিশুর মৃত্যুর যোগাযোগ থাকতে পারে।
যদিও এর আগেই গাম্বিয়াতে ৬৬ জন শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসতেই ওই কাশির সিরাপ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে গাম্বিয়া প্রশাসন। ভারতের তরফে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন জানিয়েছে ওই সিরাপগুলি একমাত্র গাম্বিয়াতেই রপ্তানি করা হয়েছিল।