Advertisment

ট্যারানটুলা আতঙ্ক: কোথা থেকে আসছে এই অযথা হিস্টিরিয়া?

একটু খোঁজ খবর নিলেই বোঝা যাবে যে এই রাজ্য়ে ট্যারানটুলা নতুন কিছু নয়। এবং বিশষজ্ঞদের দাবি, সারা বিশ্বে এই জাতের মাকড়সার কামড়ে এখন পর্যন্ত মৃত্য়ুর কোনও দৃষ্টান্ত নেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ভীষণদর্শন, তবে যমদূত নয়; ট্যারানটুলার প্রতীকী চিত্র

সাম্প্রতিক ট্যারানটুলা আতঙ্ক অমূলক, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

Advertisment

জয়প্রকাশ দাস

গত কয়েক সপ্তাহে এ রাজ্য়ে ট্যারানটুলা মাকড়সা সংক্রান্ত আতঙ্ক প্রায় গণ-হিস্টিরিয়ার রূপ নিয়েছে। মজাটা হলো, একটু খোঁজ খবর নিলেই বোঝা যাবে যে এই রাজ্য়ে ট্যারানটুলা নতুন কিছু নয়। এবং বিশেষজ্ঞদের দাবি, সারা বিশ্বে এই জাতের মাকড়সার কামড়ে এখন পর্যন্ত মৃত্য়ুর কোনও দৃষ্টান্ত নেই। বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, এই রাজ্য়ে বহু বছর ধরে এই জাতের মাকড়সা রয়েছে। এবং সাম্প্রতিক যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে তা অমূলক হলেও, কোন কোন বিশেষজ্ঞ এটাও বলছেন যে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ট্যারানটুলা কিছুটা হলেও ভয়ের কারণ হতে পারে।

ইতিপূর্বে কলকাতা-সহ রাজ্য়ের বিভিন্ন জায়গায় ট্যারানটুলার দেখা মিলেছে। কামড়ানোর প্রয়োজন নেই, ভয়াল দর্শন এই মাকড়সার রূপ দেখলেই আতঙ্ক ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। ট্যারানটুলার কামড় খেয়ে হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছেন কেউ কেউ।

আরও পড়ুন: Dengue Season: বর্ষায় প্রাদুর্ভাব এড়াতে সারাবছরই তৎপর, দাবি পুরসভার

স্কুল অফ ট্রপিক্য়াল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা তথা পতঙ্গবাহিত রোগ বিশষজ্ঞ ডাঃ অমিয়কুমার হাটির বক্তব্য়, "ট্যারানটুলা আতঙ্ক অযথাই গণ-হিস্টিরিয়ার রূপ নিয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে অবশ্য দেখা যাবে, এই হিস্টিরিয়াও নতুন কিছু নয়। উদাহরণ স্বরূপ, সপ্তদশ শতাব্দীর পেরুতে ট্যারানটুলা আতঙ্ক দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এরাজ্য়ে বহুদিন ধরেই আছে ট্যারানটুলা। সাধারনত এরা মশা এবং অন্যান্য পোকামাকড় খায়। কাজেই ট্যারানটুলা মারলে পরিবেশের ভারসাম্য় নষ্ট হতে পারে।" পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করা এই চিকিৎসকের মতে, "ট্যারানটুলা মানুষকে কামড়াতে পারে। কিন্তু এর কামড়ে পৃথিবীতে কোথাও কখনও মানুষ মারা গেছেন বলে শুনিনি। বড়জোর ইঁদুর জাতীয় ছোট প্রাণী মরতে পারে।"

"ডেঙ্গি বা নিপা ভাইরাসের ক্ষেত্রে অতঙ্ক ছড়ালে লাভ, তাতে সচেতনতা বাড়ে। দুটাই অত্যন্ত ছোঁয়াচে। ট্যারানটুলার ক্ষেত্রে অাতঙ্ক না ছড়ানোই বাঞ্চনীয়, যদিও সতর্ক থাকতে হবে," বলছেন বিশষজ্ঞ চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী। ইনিও দীর্ঘদিন ধরে পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ে গবেষণা করেছেন, ছিলেন স্কুল অফ ট্রপিক্য়াল মেডিসিনের অধিকর্তা। তাঁর আরও বক্তব্য়, "ট্যারানটুলা প্রজাতির যত মাকড়সা আছে, সবকটাই টক্সিড। মানে এদের টক্সিন আছে। অর্থাৎ বিষ আছে। যখন মানুষকে এরা কামড়ায়, তখন ওই বিষ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। যেমন সাপের বিষ আছে। সাপের বিষে মানুষের মৃত্য়ু হতে পারে। কিন্তু ট্যারানটুলার বিষ কখনই মানুষ মারতে পারে না। জ্বালা করবে, সাঙ্ঘাতিক ব্য়থাও হতে পারে, কিন্তু মৃত্যু হবে না।"

আরও পড়ুন: Nipah Virus: অযথা আতঙ্কের কারণ নেই, বলছে স্বাস্থ্য দপ্তর

তবে এই জাতের মাকড়সাকে একেবারে অবহেলা করাও ঠিক নয় বলে মনে করেন ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। "শিশুদের কামড়ালে একটা ভয়ের সম্ভাবনা থাকেই। চিকিৎসা সঠিক সময়ে না হলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্য়া হতে পারে। হতে পারে শ্বাসকষ্ট। সাপের বিষের যেমন প্রতিষেধক বা অ্যান্টি-ভেনম আছে, ট্যারানটুলার ক্ষেত্রে অ্যান্টি-অ্যালার্জিক বা স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়," ডাঃ নন্দী বলেন।

রাজ্য় জীব বৈচিত্র পর্ষদের চেয়ারম্য়ান এ কে সান্যালের দাবি, "এই জাতের মাকড়সা এখানে আগেও ছিল। মনে আছে, ১৯৮০ সালে চুরুলিয়ায় এই মাকড়সা পাওয়া গিয়েছিল। এটা নতুন কিছু নয়, এই রাজ্য়ে ১০-১২টি প্রজাতির ট্যারানটুলা রয়েছে। এই নিয়ে আতঙ্কেরও কিছু নেই। মৌমাছি কামড়ালে যেমন হয়, এর কামড়ের প্রভাব অনেকটা তেমনই। যেখানে বিষ ঢালে সেই জায়গাটা ক্ষণস্থায়ীভাবে প্য়ারালাইজ বা অবশ করে দিতে পারে।" তবে তাঁর বক্তব্য়, "বাচ্চা বা বৃদ্ধদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাই সেকেন্ডারী ইনফকশন হতে পারে। সুস্থ সবল মানুষ খুব বেশি হলে সাইকোলজিক্য়াল এফেকট্ বা নার্ভ শিথিলতায় কিছুক্ষণ ভুগবেন এর কামড়ে।"

Advertisment