এ দেশে মাঙ্কিপক্সে দ্বিতীয় সংক্রমণের খবর এসেছে এবং তা নিয়ে হইচই হচ্ছে। দুবাই থেকে কুন্নুরে পৌঁছেছিলেন ৩১ বছরের ওই যুবক, জুলাইয়ের ১৩ তারিখ। ১৮ জুলাই নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসতে জানা গিয়েছে তিনি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত। কুন্নুরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে, এবং তিনি স্থিতিশীল। মাঙ্কিপক্সে প্রথম আক্রান্তের খবর মিলেছিল এ মাসেরই ১৪ তারিখ। ৩৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে ফিরেছিলেন। তার পর নমুনা পরীক্ষায় জানা গেল তিনি মাঙ্কিপক্স পজিটিভ। ফলে, একটি উচ্চপর্যায়ের কেন্দ্রীয় দলকে কেরল পাঠানো হয়েছে, যাঁদের কাজ হবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জনস্বাস্থ্যে ব্যবস্থা নেওয়া। কেরলের ১৪টি জেলাতেই মাঙ্কিপক্স নিয়ে সতর্কতা জরি করা হয়েছে। বিমানবন্দরগুলিতে হেল্পডেস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে পাঙ্কিপক্স নিয়ে যে কোনও ধোঁয়াশা মেটানো যায় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা যায়।এর মাঝেই নতুন করে মাঙ্কিপক্স আতঙ্কে জেরবার তেলাঙ্গানা।
ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় পৌঁছেছে চূড়ান্ত সতর্কতা। সন্দেহভাজন রোগীদের আইসোলেট করার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে জেলার একাধিক সরকারি হাসপাতালে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এর সঙ্গে কথা বলার সময়, হায়দ্রাবাদের নাল্লাকুন্তায় সরকারি হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ কে শঙ্কর বলেছেন “হাসপাতালে দুটি ওয়ার্ডকে আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একটি ওয়ার্ড পুরুষদের জন্য এবং একটি ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সন্দেহভাজন রোগীদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই হাসপাতালে ৩৬ শয্যার মাঙ্কিপক্স চিকিৎসা পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কর্মী, সরঞ্জাম এবং ওষুধ সবই প্রস্তুত রাখা রয়েছে। সন্দেহভাজন রোগীর ক্ষেত্রে, আমরা গান্ধী হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য প্রস্রাব, রক্ত, গলার স্যাব এবং ক্ষত থেকে স্ক্র্যাপিংয়ের নমুনা পাঠাব। যদি কেউ ইতিবাচক পরীক্ষা করে, সেই নমুনাগুলি নিশ্চিত করার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (NIV), পুনেতে পাঠানো হবে”। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “তেলেঙ্গানায় এখনও কোনও মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি। তবে স্বাস্থ্য দফতর থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা সেরে রাখা হচ্ছে। আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই যদিও এটি একটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। এটা ঠিক চিকেনপক্স বা গুটিবসন্তের মতো। মাঙ্কিপক্স ধরা পড়লে একজন রোগীকে কমপক্ষে ২১ দিন হাসপাতালে থাকতে হবে,”।
আরও পড়ুন: <বঙ্গে দৈনিক সংক্রমণের সুনামি গতি, ভয় ধরাচ্ছে কলকাতা>
স্বাস্থ্যমন্ত্রী টি হরিশ রাওসোমবার কেরালায় রিপোর্ট করা মাঙ্কিপক্স কেসগুলি নিয়ে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের রোগ, লক্ষণ, পরীক্ষা, নির্ণয় এবং চিকিত্সা সম্পর্কে সচেতনতা প্রচারের ওপর জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের তরফে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষকে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মে মাসের শুরু থেকে সারা পৃথিবীতে মাঙ্কিপক্স ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে সমকামী এবং উভকামীদের মধ্যে। WHO বলেছে, মাঙ্কিপক্সের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়া চলছে। ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দেশগুলিতে ছড়াচ্ছে এই বানর বসন্ত। যে সব দেশে এই অসুখটি আগেও হয়েছে, যেমন নাইজেরিয়া, কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, এই সব জায়গায় সাধারণ মাত্রার চেয়ে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এখন বেশি। সারা পৃথিবীতে ১১,৫০০ জনের মাঙ্কিপক্স হয়েছে। এর মধ্যে ১, ৪৬৯ জন হল আমেরিকার, ব্রিটেনের ১, ৮৫৬ জন।
শ্বাসপ্রশ্বাসের থেকে ছড়ায় মাঙ্কিপক্স। যাঁর এই রোগ হয়েছে, তিনি যদি কাশেন বা হাঁচেন যে গুচ্ছ ড্রপলেট বেরিয়ে আসবে, তা থেকে মাঙ্কিপক্সও পৌঁছে যেতে পারে অন্য শরীরে। যদিও কোভিডের মতো দুরন্ত সংক্রামক নয় এই বানরবসন্ত। কোনও আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে বেশ খানিকটা সময় থাকলেই এটি হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক বলেছে, মাক্সিপক্সে আক্রান্ত কোনও রোগীর গায়ের পুঁজ যদি অন্য কারওর গায়ে লাগে তা হলে তাঁর এই রোগ হতে পারে। আক্রান্তের জামাকাপড় থেকেও হওয়া সম্ভব। এই রোগটি জানোয়ারের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি। প্রথমে জানোয়ারের থেকে মানুষের শরীরে, তার পর মানুষ থেকে মানুষে। এই ভাবে বানরের মতোই বানরবসন্তও এক ডাল থেকে অন্য ডালে যাচ্ছে এগিয়ে।
আফ্রিকায় প্রথম জানোয়ার থেকে মানুষের শরীরে এটি সেঁধিয়েছে বলে মনে করা হয়। যেমনটা এ দেশের হওয়ার সম্ভবনা অতি ক্ষীণ, মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ডাঃ অনুরাধা ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেস ডটকমকে বলেছেন যে কোভিডের ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং এবং নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি হায়দ্রাবাদে আমাদের স্ক্রীনিং এবং পরীক্ষার পাশাপাশি, যাত্রীদের বিমানে চড়ার অনুমতি দেওয়ার আগে আমরা বিমান সংস্থাগুলিকে ক্লিনিকাল লক্ষণগুলি যেমন জ্বর বা ফুসকুড়ি ইত্যাদি বিষয় দেখার নির্দেশ দিয়েছি," যদি কোন যাত্রী এমন কোন লক্ষণ ধরা পড়ে তবে সেই যাত্রীকে অবিলম্বে নিকটবর্তী হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তেলেঙ্গানার স্বাস্থ্য দফতরের এক সিনিয়ার আধিকারিক ডাঃ শঙ্করের কথায়, “মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। প্রথমিক পর্বটা চলে ৫ দিন পর্যন্ত। উপসর্গের মধ্যে রয়েছে– জ্বর, মাথা-ব্যথা, হাত-পায়ে ব্যথা, ক্লান্তি ভাব এ সব। ঘাম হতে পারে। সর্দি হতে পারে, গলায় সংক্রমণও। জ্বর আসার এক থেকে তিন দিনের মধ্যে ভয়ঙ্কর rash-এর আগমন হয়ে থাকে। তার পর থেকে বেশ ভালমাত্রায় যন্ত্রণা পেতে হয়। মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুর সম্ভাবনা শূন্য থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। সাধারণ ভাবে বাচ্চাদের বেশি হয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এই রোগে মৃত্যুর হার ৩ থেকে ৬ শতাংশ। চিকিৎসা বলতে সাপোর্টিং ট্রিটমেন্ট”।