শুক্রবার একাধিক রেড চালায় মহারাষ্ট্র অ্যান্টি টেররিজম স্কোয়াড (ATS), গতকাল তারা ঘোষণা করে যে কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ATS এবার আরও জানিয়েছে যে ধৃতদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক, যার মধ্যে রয়েছে বোমা এবং জেলাটিন কাঠি, উদ্ধার হওয়ার ফলে বেশ কিছু জায়গায় বড় মাপের সন্ত্রাসবাদী হামলা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতে প্রবেশ করেছে কুখ্যাত জঙ্গি মাসুদ আজহারের আত্মীয়, উচ্চ সতর্কতা বার্তা জারি
ধৃতদের মধ্যে একজনের নাম বৈভব রাউত (৪০), যে সম্ভবত হিন্দু গোবংশ রক্ষা সমিতির সদস্য, এবং যার সঙ্গে দক্ষিণপন্থী সনাতন সংস্থারও যোগ রয়েছে। এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনকে নরেন্দ্র দাভোলকার, গোবিন্দ পানসারে, এম এম কলবুর্গী, এবং গৌরী লঙ্কেশ হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আরেক ধৃত ব্যক্তি, সুধন্য গোন্ধালেকর (৩৯) সাতারার বাসিন্দা, এবং শ্রী শিবপ্রতিষ্ঠান হিন্দুস্তানের সদস্য, যার নেতা শম্ভাজি ভিডের নামে ১ জানুয়ারি ভিমা কোরেগাঁওতে হিংসার দায়ে দুটো ক্রিমিনাল কেস রয়েছে পুণা পুলিশের খাতায়। তৃতীয় ব্যক্তির নাম শরদ কাসালকার (২৫), যাকে রাউতের বাড়ি থেকে রাউতের সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়। সূত্রের খবর, ATS কাসালকারের কাছ থেকে বোমা বানানো সংক্রান্ত একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে, এবং গোন্ধালেকর, যে কিনা বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ, বাকি দুজনকে বিস্ফোরক বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।
তিনজনকেই বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন বা Unlawful Activities (Prevention) Act এর আওতায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ATS এর তথ্য অনুযায়ী, এই গ্রেফতারি অভিযান চলাকালীন তারা ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে মোট ২২টি সামগ্রী, যার মধ্যে রয়েছে ২০টি বোমা, দুটি জেলাটিনের পাত, বোমা বানানোর নির্দেশিকা লেখা একটি চিরকুট, একটি ছয় ভোল্টের ব্যাটারি, কিছু খোলা তার, কিছু ট্রানজিস্টর, এবং আঠা।
আরও পড়ুন: অর্থাভাবে বেহাল দেশের প্রথম গো অভয়ারণ্য, সঙ্কটে গো মাতা
সূত্রের আরও খবর, রাউতের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত বোমাগুলি ব্যবহারের জন্য তৈরি ছিল। "ওদের নিশ্চিত দুরভিসন্ধি ছিল, এবং স্বাধীনতা দিবস আর বকরি ঈদের আগে এত বেশি পরিমাণ মাল ধরা পড়া যথেষ্ট চিন্তার কারণ। আপাতত আমাদের তদন্তের বিষয় হলো এতগুলো বোমা ঠিক কী কারণে একত্রিত করা হচ্ছিল," জানালেন এক আধিকারিক।
ATS এও খতিয়ে দেখছে যে ধৃতদের দাভোলকার, পানসারে, কলবুর্গী, এবং গৌরী লঙ্কেশ হত্যার সঙ্গে কোনো যোগ রয়েছে কী না। "এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে এই তিনজন সনাতন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, তবে আমাদের ধারণা দুটি আলাদা মডিউল, যদিও এরা একসঙ্গে কাজ করত। ওই চারটে খুনে ছুরি বা আগনেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল, কিন্তু এদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি বোমা এবং আরও কিছু বিস্ফোরক পদার্থ। দুটো মডিউল আলাদা," বক্তব্য আরেক আধিকারিকের।
রাউতকে বেশ কিছুদিন ধরেই নজরে রাখা হয়েছিল। "একজন স্বঘোষিত গো রক্ষক হিসেবে আমরা ওকে চোখে চোখে রাখছিলাম। তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞামূলক অর্ডার জারি করা হয়," এই প্রতিবেদককে জানান পালঘরের পুলিশ সুপার মঞ্জুনাথ সিঙ্গে।
আরও পড়ুন: অনাহারে মৃত্যু ৫০০ গোরুর! ঘটনাস্থল রাজস্থান
নাল্লাসোপারাতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে একটি দোতলা বাংলোয় থাকত রাউত। এক প্রতিবেশীর বক্তব্য, সে নিজেকে গো রক্ষক হিসেবে পরিচয় দিত, এবং তথাকথিত গোমাংস ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তার।
এদিকে যদিও ATS সূত্রে জানা গেছে যে তিন অভিযুক্ত নিয়মিত সনাতন সংস্থার কার্যালয়ে যাতায়াত করত, সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে তিনজনের কেউই তাদের সদস্য নয়। পাশাপাশি অবশ্য তারা এও জানিয়েছে, রাউতকে আইনি সাহায্য প্রদান করতে ইচ্ছুক।
সংস্থার তরফে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, "ATS আধিকারিকরা যদি নিষ্ঠাবান হিন্দুদের বাড়িতে RDX রেখে তাঁদের দোষী সাজাতে পারেন, যেমনটা ঘটেছিল মালেগাঁও বম্ব ব্লাস্ট মামলায়, কে বলতে পারে যে রাউতের বেলাতেও একই ঘটনা ঘটে নি? এখন পর্যন্ত কোনরকম তথ্যপ্রমাণ মেলে নি। কাজেই রাউতকে দোষী বলাটা বিপজ্জনক।"