পুজোর মণ্ডপে খাঁচাবন্দি ৩০০ পাখি। এবারের পুজোয় যা চমক আসামের বরাক উপত্যকার সবথেকে জনপ্রিয় পুজো কমিটির। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের শুরুতেই চমকপ্রদ এই থিম ঘিরেই বিতর্ক তুঙ্গে। পাখিদের বন্দি করে রাখায়, কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্নের ঝড় তুলছেন। কেউবা আবার দ্বারস্থ বন বিভাগের।
শিলচর শহর সংলগ্ন উদারবন্দ এলাকায় কালিবাড়ি রোডের পুজো মণ্ডপ সাজানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিকে খাঁচাবন্দি করে। এটি বরাক উপত্যকার সবথেকে জনপ্রিয় পুজো এই থিমকে অবশ্য বিলকৃত রুচির পরিচয় বহলছেন অনেকেই। এলাকার জনগণের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে আয়োজকদের। শিলচর সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার বন বিভাগের আধিকারিকদের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং পাখিদের মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। বিভাগের তরফে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আয়োজকরা দোষী সাব্যস্ত হলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: মোদীকে চিঠি লেখায় অপর্ণা সেন-রামচন্দ্র গুহদের বিরুদ্ধে এফআইআর
স্থানীয় বিধায়ক মিহির কান্তি সোম অবশ্য পুজো কমিটির এই চমকে অন্যানেকর কিছু রয়েছে বলে মনে করেন না। মিহিরবাবুর কথায়, 'পাখিগুলো বিদেশি প্রজাতির, মানুষের বিনোদনের জন্য রীতিমতো চাষ করা হয় এদের, পুজোর আয়োজকরা হয়তো এই কথা মাথায় রেখেই পাখিগুলোকে ব্যবহার করছেন। তারা পাখিগুলোকে খাবার দিচ্ছেন এটা তো ভালো কথা। আমরা মানবতায় বিশ্বাসী, তবে যদি সবকিছুতেই জনগণকে বাধা দিতে হয় তাহলে তো মাংস খাওয়াও বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ আমরা মুরগি ইত্যাদি পাখিকে কেটেই মাংস খাচ্ছি। যদি সব ব্যাপারেই জনগণকে প্রতিবাদ করতে হয় তবে আমরা ঘরে কুকুর পালতেও পারব না।'
প্রতিবারই কোনও না কোনও থিমকে ভর করে পুজো করে উদারবন্দ এলাকার কালিবাড়ি রোডের পুজো কমিটি। তবে, পুজোর নামে চমক দিতে গিয়ে এবার তারা প্রায় শ'তিনেক জীবন্ত পাখিকে খাঁচা বন্দি করে মণ্ডপ তৈরি করেছে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ১৯৭২-এর আওতায় ভারতবর্ষে পশু-পাখি সহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীকে সুরক্ষা দেওয়া হয়। পুজোর নামে এই অদ্ভূত রুচি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে অনেকেই ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন, "পুজো কমিটি পাখিদের বন্দি করে এই আইন ভেঙেছেন, তাদের কড়া শাস্তি চাই।"
এব্যাপারে বন বিভাগের ডিএফও সানিদেও চৌধুরীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে, আমরা আজই একটি বিশেষ দল মন্ডপ পরিদর্শনের জন্য পাঠাচ্ছি। আয়োজকরা আমাদের জানিয়েছিলেন তারা ভারতের ওয়াইল্ডলাইফ প্রটেকশন অ্যাক্ট ১৯৭২-এর আওতায় থাকা কোনও পাখি এখানে ব্যবহার করেননি। যদি এই অ্যাক্টটি লংঘন করা হয় হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা পুজোটি বন্ধ করিয়ে দিতে পারি। তবে অ্যাক্টের ছয়টি তালিকার আওতায় থাকা পাখি যদি এর মধ্যে না পাওয়া যায়, তবে অন্য ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে। আয়োজকরা বলছেন তারা বিদেশি পাখি ব্যবহার করছেন। যদি বিদেশিপাখি গুলোর কোন ক্ষতি হয় তার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন আইন রয়েছে। প্রয়োজনে এগুলোর কথা ভাবা হবে।'
আরও পড়ুন: খিদিরপুরের মুন্সীগঞ্জ, এক চাঁদাতেই পুজো-মহরম
সাধারণত পাখিরা যে পরিবেশে থাকে পুজোমণ্ডপ তার থেকে পুরো আলাদা। মণ্ডপে থাকে উপচে পড়া মানুষের ভিড়, অত্যন্ত বেশি তাপমাত্রা এবং আলোকসজ্জা। পাশাপাশি মাইকে জোরে গান বাজানো হয় যা পাখিদের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। আয়োজকরা বলছেন তারা পাখিদের খাবার দিচ্ছেন, কিন্তু শুধু খাবার দিয়ে তাদের এভাবে দমবন্ধ পরিস্থিতিতে রেখে দেওয়া কতটাগ্রহণযোগ্য এনিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পাখিগুলো কোথা থেকে আনা হয়েছে এবং এগুলো মরে গেলে এর হিসাব কে রাখবে তাও কেউ জানেনা।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক পার্থঙ্কর চৌধুরীর এব্যাপারে জানান, 'দেশী হোক বা বিদেশী কোনও পাখিকে এভাবে বন্দি করে রাখা অন্যায়। বিনোদনের জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে জীবন্ত পাখিগুলোকে খাঁচা বন্দি করে রেখে দেওয়া অমানবিক এবং বিকৃত মানসিক অবস্থার প্রতীক। যে পাখি গুলো রাখা হয়েছে তার মধ্যে কিছু দুর্লভ প্রজাতির থাকতে পারে। তবে এগুলো পাখি বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারবেন। আমি মনে করি আর বিলম্ব না করে দ্রূত পাখি বিশেষজ্ঞদের দল পাঠিয়ে যাচাই করা উচিত। এবং আয়োজকরা অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করা উচিত।'