আবারও গণপিটুনিতে মৃত্য়ুর ঘটনা সামনে এল। তবে এবার এ ঘটনার খানিকটা ছন্দপতন হল বলা চলে। এতদিন যাবৎ গণপিটুনিতে যেসব ঘটনা সামনে এসেছে, তার মধ্য়ে কখনও চোর সন্দেহে কখনও বা ছেলেধরা সন্দেহে কিংবা কখনও গরু চোর সন্দেহে। হ্য়াঁ, সন্দেহের বশে গণধোলাইয়ের ঘটনার সাক্ষী থেকেছে এ দেশ। এবার স্কুলের এক খুদে ছাত্রীকে অপহরণ করার ছক ছিল আক্রান্তদের। আর সে কাজ করতে এসেই গ্রামবাসীদের রোষে পড়ে মৃত্য়ু হল তিন অপহরণকারীর। বিহারের বেগুসরাই জেলায় গণপিটুনিতে তিনজনের মৃত্য়ু হয়েছে। ওই তিনজনই অপহরণকারী বলে দাবি করেছে খোদ পুলিশও।
কী ঘটেছিল? গত শুক্রবার তখন সকাল সাড়ে ১০টা। বিহারের বেগুসরাই জেলার নারায়ণপিপার গ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্য়ালয়ের প্রিন্সিপাল নীমা কুমারি ক্লাস নিচ্ছিলেন। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির মোট ৫০ জন পড়ুয়া তাঁর ক্লাসে ছিল। আচমকাই জোর করে ক্লাসে ঢুকে পড়ল তিন ব্য়ক্তি। শুধু তাই নয়, ওই শিক্ষিকার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর কথা জিজ্ঞেস করল মুকেশ মাহাত নামের ওই ব্য়ক্তি।
আরও পড়ুন, ফের গণপিটুনিতে মৃত্যু, উত্তরপ্রদেশে মোষ চোর সন্দেহে হত যুবক
এরপর? ''আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়েছিল। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কথা বলতে পারছিলাম না। কোনওরকমে ইশারায় পড়ুয়াদের ক্লাসের বাইরে যেতে বলি। যখন ওই তিন ব্য়ক্তি আমার সঙ্গে তর্কাতর্কি করছিল, সেসময় কয়েকজন পড়ুয়া বাকিদের ঘটনাটা জানায়। এরপরই স্কুলের পাশে থাকা কয়েকজন গ্রামবাসী ছুটে আসেন'', সেদিনের সেই হাড়হিম ঘটনার এভাবেই বর্ণনা করলেন ওই শিক্ষিকা।
পরে মুকেশ, বৌনা সিং ও হীরা সিং নামের ওই তিন ব্য়ক্তি গ্রামবাসীদের রোষে পড়ে প্রাণ হারান। ১১ বছরের এক কিশোরীকে আক্রান্তরা অপহরণের চেষ্টা করেছিল বলে দাবি পুলিশের। তবে এ ঘটনায় এখনও কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
মুকেশ নামের ওই ব্য়ক্তি তাঁদের দিকেও বন্দুক তাক করেছিল বলে দাবি করেছেন কয়েকজন গ্রামবাসী। গণপিটুনির আগে অপর দুই ব্য়ক্তিকে স্কুলের ঘরের মধ্য়ে আটকে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে।
তবুও প্রশ্ন উঠছে? জনতা কেন আইন হাতে তুলে নিল? কেন গণপিটুনির ঘটনা রোখা গেল না? এ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার আদিত্য় কুমার বলেন যে, যে সংখ্য়ক পুলিশকর্মী ছিলেন সেদিন, তাতে খুব একটা কিছু করা যেত না। সাকুল্য়ে ৫ জন পুলিশ কর্মী ছিল গ্রামের নিকটবর্তী একটি ফাঁড়িতে। পুলিশ সুপার জানান যে, সেদিন ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল। বৌনা ও হীরার জন্য় হয়তো কিছু করতে পারত তাঁরা। কিন্তু ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই জনরোষের শিকার হয় মুকেশ। অন্য়দিকে, ওই তিন ব্য়ক্তির মধ্য়ে দু'জন গ্রামবাসীদের হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। তারা ছাড়া পেলে গ্রামবাসীদের উচিত শিক্ষা দেবে বলে হুমকি দেয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
সেদিন ঘটনার পর তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্য়ু হয় তিনজনের। কী কারণে ছাত্রীকে অপহরণ করার ছক কষেছিল মৃতরা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। একইসঙ্গে সেদিনকার ভিডিও ফুটেজ গ্রামবাসীদের থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্য়দিকে, সেদিন ঘটনাস্থলে না যাওয়ার অপরাধে চওরহি ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা সিন্টু কুমার ঝা-কে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।