২২দিন ধরে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় মাছ রপ্তানি বন্ধ থাকায় সারা রাজ্যের মাছের বাজারে ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ২২ লাখ টাকার ১০,০০০ কেজি মাছ নষ্ট হয়ে যায়। তার জেরে ত্রিপুরায় মাছ রপ্তানি বন্ধ করেছে বাংলাদেশ। আগরতলা-আখাউড়া সীমান্তে কিছু লোক ব্যবসায়ীদের থেকে বেআইনী ভাবে মোটা অঙ্কের তোলা চায়। ব্যবসায়ীরা তোলা দিতে নারাজ থাকলে বিবাদ বাঁধে। নষ্ট হয় ২৬ হাজার মার্কিন ডলারের মাছ।
বাজারে মাছ কম থাকায় স্বভাবতই চাহিদা বেশি। দাম প্রায় দ্বিগুণ। তুলসিবাটি, বটতলা বাজারে রুই, কাতলা, চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। ভেটকির সরবরাহ নেই একেবারেই। জনৈক মাছ বিক্রেতা অধীর দাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, "সেপ্টেম্বরের ৫তারিখ থেকে বটতলা বাজারে এক নাগারে বেড়েই চলেছে মাছ আর চিংড়ির দাম। ত্রিপুরায় মাছের স্থানীয় উৎপাদন যথেষ্ট নয়। স্বাভাবিক ভাবেই মাছের দাম বেড়ে গেলে ক্রেতা পেতে আমাদের খুব সমস্যা হয়"। সমীরণ দাস নামে তুলসিবাটি বাজারের আরেক মৎস্য ব্যবসায়ী জানালেন, "ভেটকি পাওয়াই যাচ্ছে না বাজারে। রুই, কাতলার স্থানীয় চাষ যতটুকু হয়, তা দিয়েই চলছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কিছু মাছ আসছে"।
আরও পড়ুন, ২০ দিন ধরে বন্ধ ইলিশ আমদানি
এক মাস আগেও আগরতলার বাজারে রুই মাছের দাম ছিল ১৫০ টাকা/কেজি। এখন দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা/কেজির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কেজি প্রতি কাতলা মাছের দাম ২০০ থেকে এখন দাঁড়িয়েছে ৩০০ তে। পাবদায় হাত ছোঁয়ানই দায়। এক মাস আগে ছিল ২০০ টাকা/কেজি। এখন দাম ৫০০ টাকা/কেজি। চিংড়ি-কুচো চিংড়ির দামও কেজি প্রতি ৫০০ থেকে বেড়ে ৬০০ হয়েছে।
ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম শাহ বলেছেন, "মৎস্য রপ্তানি বন্ধ থাকায় ত্রিপুরার স্থানীয় মাছের বাজার খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনিতেও মার্কিন ডলারের তুলনায় ভারতীয় টাকার দাম ক্রমশ পড়তে থাকায় সারা দেশ জুড়ে মাছের বাজারেই তার প্রভাব পড়ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠা দরকার। সামনেই উৎসবের মরশুম আসছে। মাছের চাহিদা বাড়তে বাধ্য। আমাদের এখানে অন্ধ্র কিংবা অন্য রাজ্যের তুলনায় বাংলাদেশের মাছের চাহিদা অনেক বেশি। পরিস্থিতি না বদলালে, মাছের দাম আরও বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে।"
আগরতলা-আখাউড়া সীমান্তের আমদানি রপ্তানি সঙ্ঘের সেক্রেটারি খোকন ভৌমিক এর বক্তব্য, "সীমান্তে গত মাস ছয়েক ধরে এই ধরণের ঝামেলার উদ্রেককারীর বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। এদের প্রতাপ দিন দিন বাড়ছে।" ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "বাংলাদেশের সঙ্গে এই নিয়ে একাধিক আলোচনায় বসা হয়েছিল। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।" পরবর্তী বৈঠকের দিন ধার্য হয়েছে ২৮ সেপ্টেম্বর। আশা করা হচ্ছে সমাধান সূত্র মিলবে তাতে, জানালেন ত্রিপুরা বিজেপির ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রতিমা ভৌমিক।