দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সবচেয়ে খারাপ সময় চলেছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনের জমানায়, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের এমন মন্তব্যের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নর। বৃহস্পতিবার রঘুরাম রাজন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রধান হিসাবে তাঁর কার্যকালের দুই-তৃতীয়াংশই কাটে বিজেপি সরকারের অধীনে। প্রাক্তন গভর্নর বলেন, "আমার কার্যকালের সময় কংগ্রেস সরকার ছিল মাত্র আট মাস, এবং বিজেপি সরকারের অধীনে ছিলাম ২৬ মাস। অর্থাৎ আমার মেয়াদের অনেকটাই বর্তমান সরকারের অধীনেই ছিল।"
রাজন, যিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক, আরও বলেন, এই ইস্যুতে কোনওরকম রাজনৈতিক বিতর্কে যেতে চান না তিনি। প্রাক্তন আরবিআই গভর্নরের বক্তব্য, "আমি কোনও রাজনীতিতে যেতে চাই না। মূল কথা হলো, আমরা একটি স্বচ্ছ অর্থনীতি তৈরি করতে চেয়েছিলাম। যে কাজটি এখনও চলছে এবং দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। পুনর্মূলধনীকরণের (recapitalisation) কাজ শেষ হলেও আরও দ্রুততার সঙ্গে কাজগুলো করতে হবে।"
প্রসঙ্গত, এর আগে ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে এক বক্তৃতায় রঘুরাম রাজন মোদী সরকারের অর্থনীতি পরিচালনার সমালোচনা করেছিলেন। তিনি নিজে ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (আরবিআই) গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বক্তৃতার সময় প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর উল্লেখ করেন যে, ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদী সরকার অর্থনীতির ক্ষেত্রে ভালো কিছুই করতে পারে নি কারণ সরকারের ভাবনা দূরদর্শী নয়। কীভাবে অর্থনীতিকে আরও উজ্জীবিত করা সম্ভব, সে সম্পর্কে ধারাবাহিকতা ছিল না। তিনি আরও বলেন, “মাত্রাতিরিক্ত কেন্দ্রীভূত চরিত্রের ফলে নরেন্দ্র মোদী সরকার দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো কিছুই করতে পারে নি, এবং দেশে আর্থিক বৃদ্ধি কীভাবে অর্জন করতে হয়, তা নিয়ে সম্যক ধারণা নেই”।
রঘুরাম রাজন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের মত জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “রাজনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, উনি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর থাকাকালীনই যে কোনও নেতাকে শুধু এক একটা ফোন কলের ভিত্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ দেওয়ার চল শুরু হয়েছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডাঃ মনমোহন সিং। রাজন হয়তো বলবেন একমাত্র মনমোহন সিং-ই দূরদর্শী ছিলেন।” সীতারমণ আরও বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময় গিয়েছে রাজন-মনমোহন জমানাতেই, কিন্তু আমরা সে সময় কেউ তা বুঝি নি।”
সিএনবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রঘুরাম রাজন বলেন, “প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে দেশে, কিন্তু সেগুলির কোনও বৃদ্ধি হয়নি। সেগুলো লোনের ক্ষেত্রে ঘাটতি তৈরি করেছে, যা অবিলম্বে ঠিক করা প্রয়োজন। সেই কাজ এখনও চলছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন আমরা এই কাজ করছি। আমরা কাজটা করেছিলাম কারণ বেশিরভাগ ব্যাঙ্কের ব্যালান্স শিট নন-পারফর্মিং লোনের জন্য আটকে ছিল।"
ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে রাজন বলেন, "দেশে যথেষ্ট মন্দা দেখা দিয়েছে। ২০১৬ সালে যে বৃদ্ধির হার ছিল ৯ শতাংশ, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশে। অবশ্যই কিছু একটা করা উচিত। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের রাজনৈতিক শক্তি এবং এই সংস্কারগুলি করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তারা কিছুই করে উঠতে পারেনি।"