Advertisment

ফেসবুকে গোমাংস সংক্রান্ত পোস্ট করে দু'বছর পর গ্রেফতার আদিবাসী শিক্ষক

২০১৭ সালে 'গো মাংস ভক্ষণ আদিবাসীদের একটি সংস্কৃতি' এই মর্মে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। ফেরার থাকার কারনে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
গ্রেপ্তার হলেন আদিবাসী এই শিক্ষক

গ্রেপ্তার হলেন আদিবাসী এই শিক্ষক

দুবছর আগের লেখা ফেসবুকে এক পোস্টের জেরে গ্রেফতার হলেন ঝাড়খন্ডের এক আদিবাসী শিক্ষক। ২০১৭ সালে 'গোমাংস ভক্ষণ আদিবাসীদের একটি সংস্কৃতি' এই মর্মে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ফেসবুকে পোস্টটি দেওয়ার পরেই তাঁর নামে অভিযোগ দায়ের হয়, কিন্তু তিনি ফেরার ছিলেন বলে তাঁকে এতদিন গ্রেফতার করা যায়নি।

Advertisment

যাঁকে ঘিরে এত অভিযোগ, তাঁর নাম জিত রাই হাঁসদা, পেশায় সরকারি স্কুলের শিক্ষক এবং জামশেদপুরের একটি কলেজের অতিথি লেকচারার। ২০১৭ সালে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন হাঁসদা, যেখানে তিনি বলেন, "পশুদের উৎসর্গ করা এবং গোমাংস খাওয়া 'জোহের ডাঙ্গরি ময়দান' উৎসবের একটি অংশ। শুধু তাই নয়, আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক অধিকার এটি।" আদালতের রেকর্ড অনুযায়ী, এর আগেও হাঁসদা গো-হত্যার বিরুদ্ধে যে আইন ছিল তার বিরোধিতা করেছিলেন এবং কেন আদিবাসীদের 'হিন্দুদের মতো' জীবনযাপন করতে হবে, এই নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিলেন।

আরও পড়ুন: হারানো পদ ফিরে পেলেন রাজীব কুমার

জামশেদপুর পুলিশের তরফ থেকে জিত রাই হাঁসদার বিরুদ্ধে ভারতীয় সংবিধানের ১৫৩ 'ক' (বিভিন্ন দলের মধ্যে শত্রুতা স্থাপনের উদ্দেশ্যে), ২৯৫ 'ক' (ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসের অপমান দ্বারা কোনও ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে) এবং ৫০৫ (সমাজকে ক্ষতিকারক বার্তা দেওয়ার অপরাধে) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। বলা হয়েছে, কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে 'অসহিষ্ণুতা, শত্রুতা এবং ঘৃণা' ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। হাঁসদার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন সাকশি থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক অনিল কুমার সিং।

কিন্তু ফেসবুক পোস্টের দু'বছর পর কেন গ্রেফতার করা হল হাঁসদাকে? উত্তরে পূর্ব সিংভূম থানার এক উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক জানান, পুলিশের কাছে জিত রাইয়ের নামে চার্জশিট জমা পড়ার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। হাঁসদার আইনজীবী শাদাব আনসারি, যিনি নিজে মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে যুক্ত, সম্প্রতি হাঁসদার প্রতিনিধিত্ব করে বলেন, "কোনও রকম প্রমাণ ছাড়াই হাঁসদার আগাম জামিন এপ্রিল মাসে বাতিল করা হয়েছিল। যদি তিনি ফেরার হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে জামিনের কোনও আদেশ কার্যকর হয় না।" (যদি কোনও ব্যক্তি ফেরার হন, সেক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৮২ এবং ৮৩'র অধীনে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়। তখন প্রযুক্তিগতভাবে আগাম জামিন রক্ষণযোগ্য থাকে না)। উল্লেখ্য এর আগেও হাঁসদার আগাম জামিন দিতে অস্বীকার করা হয়।

গত এপ্রিল মাসে হাঁসদার শুনানির দিন তাঁর আইনজীবি আদালতকে জানান, হাঁসদা যে সমালোচনা করেছিলেন, আইন এবং আইনি বিধানের ভিত্তিতে সেটিকে কখনই অপরাধ বলে গণ্য করা যায় না। কারণ হাঁসদা কেবলমাত্র তাঁর খাদ্যাভ্যাস এবং তাঁর সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। আইনজীবি আরও বলেন, "অভিযুক্তের সম্পূর্ণ অধিকার আছে তাঁর সংস্কৃতিকে সব ধরনের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার।"

আরও পড়ুন: ভোটে জেতায় মোদীকে অভিনন্দন-ফোন ইমরানের

তবে জামশেদপুর দায়রা আদালতের অতিরিক্ত বিচারপতি বলেন, হাঁসদার কলেজের অধ্যক্ষ এবং শিক্ষক সমিতি তাঁদেরকে জানায়, হাঁসদার এ ধরণের পোস্ট কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে "হিংসা এবং ঘৃণা" তৈরি করার চেষ্টা করছে। আদালতের তরফ থেকে বলা হয়, হাঁসদার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি যথেষ্ট গুরুতর, এবং এই ধরনের মন্তব্য কখনই কোনও সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক অধিকারের সুরক্ষার অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। এই সব মন্তব্যের কারনেই সমাজে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে শত্রুতা, অসহিষ্ণুতা তৈরি হতে পারে। এই মর্মে আদালতের তরফ থেকে তাঁর আগাম জামিন বাতিল করা হলো। উল্লেখ্য, হাঁসদার পরিবারের তরফ থেকে এ ব্যাপারে কোনও রকম মন্তব্য করা হয় নি।

Read the full story in English

jharkhand Facebook
Advertisment