১৯৪৭-এর প্রথমার্ধটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। একদিকে ঔপনিবেশিক শাসন শেষ হচ্ছে। সে ব্যাপারে ভারতবাসী নিশ্চিত থাকলেও ক’ভাগে ভাগ করা হবে দেশকে, তা জানতেন না। একদিকে পণ্যের দাম বাড়ছে ক্রমশ, দেখা দিচ্ছে খাদ্য সঙ্কট, অন্যদিকে মানুষে মানুষে ঐক্য এসে ঠেকছে তলানিতে।
এই সময় সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা সাড়ে পাঁচশ দেশীয় রাজ্য (প্রিন্সলি স্টেট নামে পরিচিত) এক ছাতার তলায় আনার লক্ষ্যে ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোয় অনেক পরিবর্তন আসে, একাধিক বিভাগ তৈরি হয়। পরাধীন ভারতের এইসমস্ত দেশীয় রাজ্যগুলি আয়তনে, সংস্কৃতিতে, আর্থিক পরিকাঠামোর দিক থেকে একটা আরেকটার থেকে সব আঙ্গিকেই ছিল ভিন্ন। এই রকম পরিস্থিতিতে মহাত্মা গান্ধী একবার মন্তব্য করেছিলেন, “রাজ্যগুলোর মধ্যে এই গভীর সমস্যা একমাত্র তুমিই সমাধান করতে পারো।” এই ‘তুমি’ আর কেউ নয়, ‘লৌহ মানব’ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। আজ ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্যাটেলের জন্ম জয়ন্তী উদযাপন করছি আমরা।
প্রশাসনিক দক্ষতা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে সারা জীবন কাজ করে গিয়েছেন বল্লভভাই। সময় কম ছিল, অথচ চাপ ছিল অমানুষিক। কিন্তু মানুষটা তো যে সে নন, স্বয়ং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। সমস্ত স্বশাসিত রাজ্যগুলোকে এক এক করে স্বাধীন ভারতের অংশ করে নেওয়ার পেছনে প্যাটেল এবং তাঁর দলের অবদান অনস্বীকার্য। ভারত তার আজকের মানচিত্র পেয়েছে এই মানুষটার জন্যেই।
১৯৪৭-এর ১৫ আগস্ট আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলাম। এক জাতি হিসেবে ভারতকে তৈরি করার কাজ তখনও অনেক বাকি। স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে, গরিব এবং প্রান্তিক মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে তৈরি করলেন সর্দার প্যাটেল। খুবই অভিজ্ঞ প্রশাসক ছিলেন তিনি। ১৯২০-র দশকে আহমেদাবাদের পুরসভায় কাজ করার সুবাদে তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়েছিল। এ ছাড়া নগর পরিকাঠামো উন্নত করার ব্যাপারেও স্বচ্ছতা, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, জলনিকাশ, সবেতেই তিনি বিশেষ জোর দিয়েছিলেন।