নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে দিয়ে দিল্লি হাইকোর্ট ৪২ জন পিএসি (প্রভিশনাল আর্মড কনস্টেবুলারি)-র ১৬ জন প্রাক্তন সদস্যের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিল। ১৯৮৭ সালে উত্তরপ্রদেশের মীরাটের হাশিমপুরা গ্রামে ৪২ জন মুসলিমকে হত্যার দায়ে দোষী হয়েছে এই ১৬ জন। বিচারপতি এস মুরলীধর এবং বিনোদ গোয়েলকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ বলেছে, এ ঘটনায় নিরস্ত্র অসহায় মানুষদের বেছে নিয়ে খুন করা হয়েছে। ২০১৫ সালে নিম্ন আদালত অভিযুক্তদের খালাস করে দিয়েছিল। নিম্ন আদালতের যুক্তি ছিল, অভিযুক্তরা যে পিএসি আধিকারিক, সে কথা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত নয়।
অভিযুক্তরা সকলেই এখন অবসরপ্রাপ্ত। এরা সকলেই ভারতীয় দণ্ডবিধির হত্যা, অপহরণ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং প্রমাণ লোপাটের ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। শুরুতে এ ঘটনায় অভিযুক্তের সংখ্যা ছিল মোট ১৭ জন। তাদের মধ্যে একজনের বিচার চলাকালীন মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন, রাফালে চুক্তির দাম নিয়ে এবার কেন্দ্রকে হলফনামা পেশের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, উত্তর প্রদেশ সরকার এবং ওই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া জুলফিকার নাসির নামে এক ব্যক্তি। গত ৬ সেপ্টেম্বর মামলার রায়দান স্থগিত রেখেছিল আদালত।
ঘটনার দিন থেকে বুধবারের রায় পর্যন্ত যা যা ঘটেছে, সেগুলি এক নজরে
২২ মে ১৯৮৭: উত্তরপ্রদেশের মীরাটের হাশিমপুরা গ্রাম থেকে ৫০ জন মুসলমানকে তুলে নিয়ে যায় পিএসি-র একটি দল। এরপর তাঁদের গুলি করে খালের দলে ফেলে দেওয়া হয়। ৪২ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
১৯৮৮: উত্তরপ্রদেশ সরকার ঘটনার সিবি-সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয়।
ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪: ৬০জন পিএসি আধিকারিক ও পুলিশ কর্মীকে অভিযুক্ত বলে জানিয়ে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে সিবি-সিআইডি।
২০ মে, ১৯৯৬: উত্তর প্রদেশ পুলিশের সিবি সিআইডি গাজিয়াবাদের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে ১৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে। সাক্ষী হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয় ১৬১ জনের নাম।
সেপ্টেম্বর ২০০২: ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও যাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁদের তরফ থেকে করা আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলা স্থানান্তরিত হয় দিল্লিতে।
জুলাই ২০০৬: ১৭ জনের বিরুদ্ধে দিল্লি আদালত ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, প্রমাণ নষ্ট এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে চার্জ গঠন করে।
৮ মার্চ, ২০১৩: এ ঘটনায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পি চিদাম্বরম যুক্ত বলে অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য সুব্রহ্মণিয়ন স্বামীর করা আবেদন খারিজ করে দেয় নিম্ন আদালত।
২২ জানুয়ারি, ২০১৫: নিম্ন আদালত রায়দান স্থগিত রাখে।
২১ মার্চ, ২০১৫: নিম্ন আদালত ১৬ জন অভিযুক্তকেই তাদের পরিচয় সম্পর্কে বেনিফিট অফ ডাউটের ভিত্তিতে খালাস করে দেয়।
১৮ মে, ২০১৫: নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ঘটনায় মৃতদের পরিবার এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা।
২৯ মে, ২০১৫: নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উত্তর প্রদেশ সরকারের করা আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট ১৭ জন পিএসি কর্মীর বিরুদ্ধে নোটিস জারি করে।
ডিসেম্বর ২০১৫: ঘটনার আরও তদন্ত চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: দিল্লি হাইকোর্ট সুব্রহ্মণিয়ন স্বামী এবং অন্যান্যদের আবেদনকে মামলার সঙ্গে যুক্ত করে।
৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮: দিল্লি হাইকোর্ট রায়দান মুলতুবি রাখে।
৩১ অক্টোবর, ২০১৮: দিল্লি হাইকোর্ট ৪২ জনকে হত্যার জন্য ১৬ জন প্রাক্তন পিএসি কর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করল।