বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, "বাংলাই বিনিয়োগের সেরা ঠিকানা।" মমতার সেই কথাই কার্যত ঠারেঠোরে মানছেন উত্তর প্রদেশের বেশ কিছু ট্যানারি বা চামড়া কারখানার মালিক। যার ফলে যোগীরাজ্য থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে এ রাজ্যে আসছেন ট্যানারির মালিকরা। ইতিমধ্যেই মমতা সরকারের কাছ থেকে জমিও পেয়েছেন কয়েকজন ট্যানারি মালিক। কানপুরের ১২টি ট্যানারির জন্য এ রাজ্যে জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনেই ট্যানারির জন্য জমি বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
কানপুরে আন্দাজ ৪০০টি ট্যানারি রয়েছে। পাশাপাশি উন্নাও জেলায় রয়েছে ৪০টি ট্যানারি। প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলার জন্য গঙ্গায় ট্যানারির বর্জ্য যাতে না ফেলা হয়, সে কারণে ওই ট্যানারিগুলো গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকার। যার জেরে এই সময়ে স্বাভাবিকভাবেই বড়সড় আর্থিক ধাক্কা খেয়েছেন ট্যানারি মালিকরা।
আরও পড়ুন, নিজের ও হাতির মূর্তি বসানোর টাকা ফেরত দিতে হবে মায়াবতীকে
উত্তর প্রদেশ থেকে বাংলায় ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য চার মাস আগেই মমতা সরকারের দ্বারস্থ হন ট্যানারি মালিকরা। এ রাজ্যে জমির জন্য কানপুরের ৮০ জন ব্যবসায়ী আবেদন করেন। দু’সপ্তাহ আগেই ১২টি আবেদনপত্রে অনুমোদন দেওয়া হয়। শুক্রবারই ওই আবেদনকারীদের জমি বরাদ্দের চিঠি সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে বলে খবর।
এ প্রসঙ্গে কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টের রিজিওনাল চেয়ারম্যান জাভেদ ইকবাল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও বস্ত্র দফতর এ নিয়ে চিঠি ইস্যু করেছে। প্রতি বর্গ মিটার পিছু ২,১৫০ টাকার বিনিময়ে বানতলা লেদার কমপ্লেক্সে রাজ্য সরকার আমাদের জমি দিচ্ছে।"
আরও পড়ুন: রাজ্যে ২ লক্ষ ৮৪ হাজার কোটির লগ্নি প্রস্তাব, ‘বাংলাই বিনিয়োগের সেরা ঠিকানা’
উত্তর প্রদেশে ট্যানারি মালিকদের অনীহা নিয়ে সে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিং বলেছেন, "কোথায় ব্যবসা করবেন, সেটা মালিকদের সিদ্ধান্ত। যেখানেই ওঁরা যান না কেন, ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (জাতীয় পরিবেশ আদালত) ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলতে হবে ওঁদের।" সিদ্ধার্থনাথ আরও বলেছেন, এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার নাক গলাবে না।
উত্তর প্রদেশ লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র আশরফ রিজওয়ান বলেন, "কলকাতা একটি মেট্রোপলিটন সিটি, যেখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে, তাই আমরা বাংলায় ট্যানারি নিয়ে যাচ্ছি। কানপুর থেকে রপ্তানির জন্য বন্দরে নিয়ে যেতেই আমাদের কন্টেনার পিছু ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। কলকাতায় সমুদ্র কাছেই। ওখানে শ্রমিক সংখ্যাও বেশি।" কানপুরে এক ট্যানারির মালিক আশরফ আরও বলেন, "গঙ্গা দূষণ নিয়ে আমাদের ওপর মিথ্যা দোষারোপ করা হচ্ছে। প্রায়শই ট্যানারি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই আমরা ট্যানারি সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
উল্লেখ্য, যোগী রাজ্যে গোমাংসের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়েও চর্চা চলছে। এর জেরে সে রাজ্যে ট্যানারি শিল্পের ভবিষ্যত কার্যত সংকটের মুখে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলায় উত্তর প্রদেশের ট্যানারি মালিকদের জায়গা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদক্ষেপ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের। পাশাপাশি, বাংলায় ট্যানারি মালিকদের জায়গা দিয়ে রাজ্যের শিল্পমুখী দিকটি যেমন তুলে ধরা হলো, তেমনই বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিও জোরালো হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
Read the full story in English