বারবার তিনবার। এই নিয়ে ২০১৮ সালে তিন তিনবার আংশিকভাবে 'শাট ডাউন' হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। সরকারি কাজকর্ম লাটে উঠল শনিবার থেকে, কারণ রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল বানানোর খরচের দাবী নিয়ে একমত হতে পারলেন না সেদেশের সাংসদরা। ট্রাম্পের মূল দাবী ছিল, তাঁর বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত এবং প্রতিশ্রুত দেওয়াল তুলতে বাজেটে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের সংস্থান রাখতে হবে, এবং এই নিয়ে হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং সেনেটের মধ্যেও দরাদরির যে দেওয়াল উঠল, তা ভাঙা গেল না কিছুতেই।
শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষ মুহূর্তের বৈঠক মুলতুবি করে দেন সাংসদরা। এর আগে চলতি বছরে দু'বার আংশিক বন্ধ হয়েছে সরকারি কাজকর্ম, একবার জানুয়ারি মাসে তিনদিনের অচলাবস্থার পর, এবং ফেব্রুয়ারি মাসে কয়েক ঘন্টার জন্য।
সংসদের দুই কক্ষের মতানৈক্যের ফলে গতকাল মাঝরাতের পর থেকে তামাদি হয়ে গেল আমেরিকার এক-চতুর্থাংশ ফেডারেল সংস্থার তহবিল, যাদের মধ্যে রয়েছে দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ, আবাসন এবং নগরোন্নয়ন বিভাগ, এবং প্রশাসনের অন্যান্য শাখা। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে হাজার হাজার সরকারি কর্মী হয় বিনা মাইনের চাকরি করবেন, নাহয় অস্থায়ী ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হবে তাঁদের। কারণ এবার ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তাঁর দাবী আদায় করতে তিনি দীর্ঘমেয়াদী অচলাবস্থার জন্য প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: ‘ইডিয়ট’ লিখলেই গুগল জুড়ে ট্রাম্পের মুখ, পিচাই-এর প্যাঁচে পড়লেন বুঝি?
শাট ডাউন শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে ট্রাম্প জানান, সমস্যার সমাধান খোঁজার দায় ডেমোক্র্যাটদের। ওদিকে ডেমোক্র্যাট শীর্ষ নেতারা অভিযোগ করেন, ট্রাম্প তাঁর "বদমেজাজি খেয়ালিপনার বশে" এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। রাষ্ট্রপতির কথায়, "আমাদের শাট ডাউন হতে চলেছে। কিচ্ছু করার নেই কারণ আমাদের ডেমোক্র্যাট ভোটগুলো দরকার।"
মার্কিন সাংসদদের আজ আবার বৈঠক করার কথা ছিল। ট্রাম্পের তাঁর দেওয়ালের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাড় করার এই শেষ সুযোগ, কারণ জানুয়ারি মাস থেকে হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের দখল নিতে চলেছে ডেমোক্র্যাটরা। গত বুধবার ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খরচ চালানোর মতো একটি অস্থায়ী বাজেট পাস করা হয়েছিল, কিন্তু ট্রাম্পের দেওয়ালের খরচ তার মধ্যে ধরা হয় নি।
কিন্তু রাষ্ট্রপতি জোর দিয়ে বলেন, ওই বাজেটে তিনি তখনই সই করবেন, যখন দেওয়ালের খরচ তার মধ্যে ধরা হবে। অগত্যা বৃহস্পতিবার হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস আইন করে ওই পাঁচ বিলিয়ন ডলারের আবেদন মঞ্জুর করার ব্যবস্থা করে, কিন্তু শুক্রবারই স্পষ্ট হয়ে যায় যে সেই প্রস্তাব সেনেটে পাস করানোর মতো লোকবল দলের নেই, কাজেই তা ভোটে তোলাই হয় নি। ফলস্বরূপ ঘনীভূত হয় অনিশ্চয়তা। ডেমোক্র্যাটদের দৃঢ় বক্তব্য ছিল, ট্রাম্পের প্ল্যানের খরচ বহন করার দায় দেশের করদাতাদের নয়।
আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প
শুক্রবার তাঁর টুইটার পোস্টে ট্রাম্প আরও বলেন, "আমরা চাই না এমন সব লোক এদেশে ঢুকুক যাদের এখানে থাকার কথা নয়"। পোস্টের অংশ হিসেবে যে ভিডিও দেওয়া হয়, তাতে দেখলে মনে হয় কিছু অভিবাসী একটি দেওয়ালের গায়ে ধাক্কা মারছেন, সঙ্গে ট্রাম্প বলে চলেছেন, "ওখানে বিষম বিপদ", এবং তাঁর কথায় উঠে আসছে ড্রাগস, মানুষ পাচার, এবং বিভিন্ন গ্যাংয়ের প্রসঙ্গ।
উল্লেখ্য, অতীতে তাঁর ভয় দেখানোর চেষ্টা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। "আমরা ওদের ইউএসএ-তে চাই না। একমাত্র উন্নত সীমান্ত রক্ষা ছাড়া তা সম্ভব নয়। কাজেই দেওয়াল! বা বেড়া, বা যা বলতে চান," বলেন রাষ্ট্রপতি।