বিশ্ব জুড়ে নতুন আতঙ্কের নাম মাঙ্কি পক্স। বিশ্বের একাধিক দেশে মিলেছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এর মাঝেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি রাজ্যে নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন। সিডিসি আধিকারিকরা জানিয়েছেন ইতিমধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তিদের সন্ধান করে তাদের আইসোলেট করা হচ্ছে। রোগ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য সব রকমের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
সিডিসি সূত্রে বলা হয়েছে বিশ্বে এখনও পর্যন্ত এই রোগে ৭০০ জন আক্রান্ত হলেও কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। রোগ নিয়ে অযথা আতঙ্ক করতেও নিষেধ করা হয়েছে। কীভাবে এই প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল এবং কীভাবে এটি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে সে সম্পর্কে আরও জানতে সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও সহযোগিতা করছে।
বাইডেন সরকারের সংক্রামক রোগ সম্পর্কিত শীর্ষ পরামর্শদাতা অ্যান্তনি ফাউচি বলছেন, বেশির ভাগ প্রতিষেধক নেওয়া মানুষ এখনও সুরক্ষিত। তবে প্রতিষেধক কত দিন কাজ করবে কারও দেহে, তা নির্ভর করছে সেই ব্যক্তির রক্তের সক্ষমতার উপর। ফলে ফাউচি না বললেও একটা ঝুঁকি কিন্তু থেকেই যায়।
ফলে চিন্তার ঘড়ি ছুটিয়ে শনৈ শনৈ মাঙ্কিপক্স বাড়ছে, সারা পৃথিবীতে ২৬০ জনের এই অসুখ হয়েছে। ২১টি দেশে এটির গতিপ্রকৃতি কেমন, তার উপর নিরন্তন নজর রেখে চলা হচ্ছে। নেকের এমনও মত যে, কোথাও কোথাও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই এই অসুখের।
বৃহস্পতিবার সিডিসি-র প্রধান ডা. রোশেল ওয়েলনক্সি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, আমেরিকার ৪৬টি রাজ্যে ৭৪টি ল্যাব মাঙ্কিপক্সের পরীক্ষায় উপলব্ধ। এক সঙ্গে তারা এক সপ্তাহে ৭ হাজার নমুনার পরীক্ষা করতে পারবে। সিডিসি এই ক্ষমতাটা আরও বাড়ানোর কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্স ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, এমনকি প্রাণও নিতে পারে। কিন্তু এটি এপিডেমিক হয়ে উঠবে না বলেই মনে হচ্ছে। সম্প্রতি আক্রান্তদের পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে এক নয়া তত্ত্ব সামনে আনছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা, যৌন মিলনেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ভাইরাস।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারির পর মহারাষ্ট্রে রেকর্ড সংক্রমণ, ভিড়ে মাস্ক পরার আবেদন
অর্থাৎ, মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সঙ্গম করা হলে তাঁর সঙ্গীর-ও এই বিশেষ প্রকার বসন্তটিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যদিও এর আগে ধারণা করা হয়েছিল, ড্রপলেট থেকেই এই রোগটি ছড়ায়। হাম, বসন্ত, স্কার্ভি, সিফিলিসের কিছু কিছু লক্ষণের সঙ্গে এই রোগের উপসর্গের মিল পাওয়া যায়। প্রথমে জ্বর, মাথা বা গায়ে ব্যথার মত লক্ষণ। সেইসঙ্গে ক্লান্তি। হতে পারে কাঁপুনিও। এরপরই গায়ে ছোট ছোট ক্ষতচিহ্ন দেখা দেয়।
বিশ্বে দ্রুতহারে ছড়াচ্ছে মাঙ্কিপক্স। আগে আফ্রিকাতেই বাড়ছিল। এখন আফ্রিকার বাইরে অন্যান্য মহাদেশেও দ্রুতহারে ছড়াচ্ছে। প্রতিদিনই এই পরিসংখ্যান বৃদ্ধির ওপর নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। উদ্বেগ চেপে রাখতে পারল না ‘হু’। আফ্রিকা বাদে অন্যান্য মহাদেশেও মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
১৯৫০ এর দশকে এই ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ঘটে বাঁদরের মধ্যে। সম্প্রতি করোনার মধ্যেই বাড়বাড়ন্ত মাঙ্কিপক্সের। ইতিমধ্যেই ২০টি দেশে সংক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে যা নিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গলাতেও। বর্তমানে, এই ভাইসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইজরায়েল, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্কটল্যান্ড, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।যখন বিশ্বের একাধিক দেশে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। সম্প্রতি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক আধিকারিক মাঙ্কিপক্সের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আশঙ্কা করেছেন একাধিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। একই সঙ্গে গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তিনি।
ভারতও এই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক। ইতিমধ্যে একাধিক বিমানবন্দরে চরম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজ্যগুলিকে মাঙ্কি পক্স নিয়ে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। আর সেই বার্তা আসার পরেই নয়া এই ভাইরাস নিয়ে বিশেষ সতর্কতা নবান্ন’র। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে কলকাতা পুরসভার তরফে। এবার বিদেশ থেকে রাজ্যে আসা ব্যক্তিদের উপর নজরদারি বাড়ানো হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। আর সেই সময়ে কোনও ব্যক্তির শরীরে মাঙ্কি পক্সের উপসর্গ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আইসোলেশনে পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্ত বলেও জানা গিয়েছে।
এদিকে বিশ্বজুড়ে মাঙ্কিপক্সের বাড়বাড়ন্তের মাঝে আইসিএমআর সাফ জানিয়েছে মাঙ্কি পক্স সংক্রমণের ঘটনা রুখতে আইসিএমআর সর্বতোভাবে প্রস্তুত। আইসিএমআর বিজ্ঞানী ডাঃ অপর্ণা মুখার্জি বলেন, “মাঙ্কিপক্স নিয়ে লোকেদের প্যানিক করা একেবারেই উচিত নয়। এটা একদমই নতুন ভাইরাস নয়। আমাদের কিছু সাবধানতা মেনে চলতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাঙ্কিপক্স নিজে থেকেই ২১ দিনের মাথায় সেরে যায়। তাই অযথা আতঙ্ক নয়, সতর্ক থাকুন” ।