উত্তরপ্রদেশে নির্যাতিতা কিশোরীর বাবার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এবার নয়া মোড়। প্রাণভয়ে নিজের গ্রামে ফিরতে চাইছে না কিশোরী। নিজের বাড়িতে ফিরতে অনিচ্ছুক নির্যাতিতার পরিবারের বাকি সদস্যরাও। আপাতত তাই সরকারি গেস্ট হাউসেই ঠাঁই মিলেছে কিশোরী ও তার পরিবারের সদস্যদের। এই পরিস্থিতিতে বাড়ি ফিরতে চান না বলে অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থার আর্জি জানিয়ে উন্নাওয়ের জেলাশাসকের দ্বারস্থ হন তাঁরা। জেলাশাসকের উদ্যোগেই কিশোরী ও তার পরিবারের সদস্যদের থাকার জন্য সরকারি গেস্ট হাউসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নির্যাতিতা কিশোরীর বাবার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবারই গ্রেফতার করা হয়েছে বিজেপি বিধায়কের ভাই অতুল সিং সেরেঙ্গকে। অতুলসহ ৫ জনকে এ ঘটনায় জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। কিশোরীর বাবাকে মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বিজেপি বিধায়কের ভাইকে। এ ঘটনার তদন্তে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেরেঙ্গকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে এই পরিস্থিতিতে নিজেদের বাড়িতে ফেরা ঠিক হবে না বলেই মনে করছেন কিশোরীর মা। যতক্ষণ না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, ততক্ষণ নিজেদের গ্রামে তাঁরা ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন কিশোরীর মা। ওই বিজেপি বিধায়ক ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরা নিশ্চয়ই তাঁদের বিরুদ্ধে অন্য কোনও ছক কষছেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কিশোরীর মা। বিধায়কের ভয়ে গ্রামের কেউই যে তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন না সেকথাও বলেছেন তিনি। প্রসঙ্গত, বিজেপি বিধায়কের স্ত্রী সঙ্গীতা সিং সেরেঙ্গ উন্নাও জেলা পঞ্চায়েতের প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে ধৃত অতুল সিংয়ের স্ত্রী অর্চনা সিং গ্রামের প্রধান।
মাখি গ্রামের কেউই খুব একটা এই ঘটনায় মুখ খুলতে চাইছেন না। যদিও ইতিমধ্যেই গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুধু কিশোরীর পরিবারই নয়, এ ঘটনার পর গ্রাম ছেড়েছেন অনেকেই। তদন্তে তাঁদেরও ডাকা হতে পারে, এই ভয়ে অনেকেই নিজেদের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গিয়েছেন।
আরও পড়ুন, উত্তরপ্রদেশে নির্যাতিতার বাবার মৃত্যু, ধৃত অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়কের ভাই
বিধায়কের বাড়ির উল্টোদিকের বাড়িতেই বসবাস কিশোরীর। মঙ্গলবার বিধায়কের বাড়িতে গিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি। কিন্তু সেসময় বিধায়ক ঘনিষ্ঠ মহেন্দ্র ত্রিবেদী ছাড়া সেবাড়িতে কারোর দেখা মেলেনি। বিরোধীরা মিথ্যা মামলায় বিধায়ক ও তাঁর বাড়ির সদস্যদের ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মহেন্দ্র।
অন্যদিকে কিশোরীর বাবার মৃত্যুর ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকার ও রাজ্যে পুলিশের প্রধানকে নোটিস দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
আরও পড়ুন, উত্তরপ্রদেশে নির্যাতিতার বাবার মৃত্যু পুলিশ হেফাজতে! অস্বস্তিতে যোগী সরকার
এদিকে এ ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেরেঙ্গের। ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন জমা দিয়েছেন এক আইনজীবী। আগামী সপ্তাহেই এই মামলা শুনবে দেশের শীর্ষ আদালত। এলাহাবাদ হাইকোর্টেই এ ঘটনায় মামলার শুনানি আগামী ১২ এপ্রিল।
২০১৭ সালের জুন মাসে ১৭ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেরেঙ্গের বিরুদ্ধে। এরপর গত এক বছর ধরে বারবার অভিযোগ জানিয়েও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। এমনকি এ ব্যাপারে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথেরও দ্বারস্থ হয় কিশোরী। কিন্তু তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ নির্যাতিতার। গত রবিবার এ ঘটনা নয়া মোড় নেয়। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিশোরী। অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করায় এই পদক্ষেপ বলে জানায় কিশোরী। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। এদিকে এর পরের দিনই কিশোরীর বাবার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। জেল হেফাজতেই কিশোরীর বাবার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনাটির পর নড়েচড়ে বসে যোগীরাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন।