প্রতি বছর বিশ্বে পাঁচ বছরের মধ্যে যত শিশু মারা যায় তার একের চার অংশের মৃত্যুর কারণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ভারত এবং ভারতের মতো নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশগুলোয় এই বয়সের ৯৮ শতাংশ শিশুই বায়ু দূষণের শিকার। সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organisation বা WHO) একটি সমীক্ষা প্রকাশ করে এই তথ্য জানাল। WHO-এর রিপোর্ট বলছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বছরে প্রায় ৬ লক্ষ শিশুর (যাদের বয়স ১৫ বছরের নীচে), মৃত্যুর কারণ বায়ু দূষণ।
জনসংখ্যার নিরিখে পৃথিবীর ১৮ শতাংশই ভারতে। আর ফুসফুসে বিষ মেশানোয় তারও প্রায় দ্বিগুণ জায়গা জুড়ে আছে আমাদের দেশ। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, সারা পৃথিবীতে যত সংখ্যক মানুষ ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত হন, তার ৩২ শতাংশ ভারতীয়। ২০১৬-তে ভারতে ঘটা ১০.৯ শতাংশ মৃত্যুর কারণ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, যেটি দেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ। এ দেশের মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ইশ্চেমিক হার্ট ডিজিজ (হৃদজনিত রোগ)-এ। কয়েক মাস আগেই একটি রিপোর্টে জানিয়েছিল WHO।
ফুসফুসের সংক্রমণের সবচেয়ে বড় কারণ অবশ্যই বায়ু দূষণ। ঘরে ঘরে ছেয়ে যাওয়া সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ) রোগের এক তৃতীয়াংশ হয় বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা থেকে। ২৫ শতাংশ হয় ঘরের এবং তার আশেপাশের দূষণ থেকে। ২১ শতাংশের জন্য দায়ী ধূমপান। প্রসঙ্গত, দেশের স্বাস্থ্যনীতি অনুসারে ২০১৭-তেই ঘোষণা করা হয়েছিল, যে সমস্ত কারণে অপরিণত বয়সে মৃত্যু হচ্ছে মানুষের, ২০২৫ সালের মধ্যে তা ২৫ শতাংশ কমাতেই হবে।
WHO-এর সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর এই বয়সের প্রায় ৫ লাখ ৭০ হাজার শিশু মারা যায় শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের জন্য। ৩ লাখ ৬১ হাজার মারা যায় অস্বাস্থ্যকর জল থেকে হওয়া ডায়েরিয়ায়। ২ লাখ ৭০ হাজার শিশু প্রথম মাসেই মারা যায় অপরিণত বয়সে জন্মের কারণে। পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে ২ লাখ শিশু মারা যায় ম্যালেরিয়ায়।
বাতাসের গুণগত মান পরিমাপ করা হয় সেখানে উপস্থিত পার্টিকুলেট ম্যাটারের আধিক্যের ভিত্তিতে। ভারতের মতো দেশে পিএম ২.৫ যুক্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসে ৯৮ শতাংশ মধ্যবিত্ত অথবা নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশু। তুলনায় উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুদের ৫২ শতাংশ এই বিষাক্ত বায়ুর সংস্পর্শে আসে। পিএম ১০ যুক্ত বায়ুর চেয়েও বেশি ক্ষতিকারক হল পিএম ২.৫। এ ক্ষেত্রে দূষিত বায়ুকণার ব্যাসার্ধ অনেক কম হওয়ায় খুব সহজেই শরীরে প্রবেশ করে শরীরকে বিষাক্ত করে তোলে তা।
শিশু মৃত্যুর অন্যান্য কারণের মধ্যে পরিবেশ সবথেকে সাংঘাতিক বলে জানাচ্ছেন, WHO-এর ডিরেক্টর জেনারেল ডক্টর মার্গারেট চ্যান। তিনি বলেন, "শিশুদের ছোটো শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা সব কিছুই খুবই কোমল। দূষিত বায়ু আর জলের সংস্পর্শে এগুলো মোটেই সুরক্ষিত নয়। এই ক্ষতি শুরু হয় মায়ের গর্ভ থেকেই। যার ফলে অপরিণত শিশুর জন্ম হয় ও তার পর জটিলতা ক্রমশ বাড়ে। তা ছাড়া ছোটো শিশু থেকে আরম্ভ করে স্কুলে যেতে শুরু করা বাচ্চাদের মধ্যে বায়ু দূষণের প্রভাব পড়ে। ঘরে বাইরে দূষিত বায়ু, ধোঁয়া গ্রহণ করে তারা। ফলে ‘চাইল্ডহুড নিউমোনিয়া’, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয় তাদের শরীরে। দেখা দেয় হৃদরোগ, হাঁপানি। এর থেকে বেড়ে যায় ক্যানসার, স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনাও।"
Read the full story in English