Advertisment

রাজ্যসভায় মনোনীত সদস্যের 'সেই দিন গিয়েছে', এখন সবাই 'রাজনৈতিক সিলমোহর', কেন?

রাজ্যসভা গঠন করা হয়েছিল ১৯৫২ সালে। ১৪২ জনকে সদস্যকে মনোনীত করা হয়েছে তারপর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
rajyasabha

বুধবার রাজ্যসভায় সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে সঙ্গীতশিল্পী ইলাইয়ারাজা, ক্রীড়াবিদ পি টি ঊষা, তেলুগু চিত্রনাট্যকার ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদ এবং সমাজসেবী আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব বীরেন্দ্র হেগড়কে। এই চার জনই দক্ষিণ ভারতের, তবে চারটি আলাদা রাজ্যের। তামিলনাড়ু, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং কর্নাটকের। চার জন রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে থাকবেন ২০২৮-এর জুলাই পর্যন্ত। সংসদের উচ্চকক্ষে এখন ন'জন মনোনীত সদস্য এর ফলে। বাকি পাঁচ জন হলেন-- আইনজীবী মহেশ জেঠমালানি, নৃত্যশিল্পী সোনাল মানসিং, রাজনীতিবিদ রাম শকল, লেখক রাকেশ সিনহা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তিন মনোনীত সদস্যের পদ খালি রয়েছে।

Advertisment

সংবিধান মনোনীত সদস্যদের নিয়ে কী বলেছে?

সংবিধানের ধারা ৮০ অনুযায়ী রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতি ১২ জনকে মনোনীত করতে পারেন। এও বলা হয়েছে, যাঁদের রাষ্ট্রপতি মনোনীত করবেন তাঁদের সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সমাজ কল্যাণ ইত্যাদি কোনও ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্ব থাকতে হবে। রাজ্যসভা গঠন করা হয়েছিল ১৯৫২ সালে। ১৪২ জনকে সদস্যকে মনোনীত করা হয়েছে তারপর। এই তালিকায় নানা ক্ষেত্র থেকে কৃতী মানুষ রয়েছেন। তবে, সরকারের প্রতি আনুগত্য না থাকলে এই মনোনয়ন পাওয়া যায় না অনেক দিন হল, বলে থাকেন অনেকেই।

মনোনীত সদস্যদের কাজ কী?

নির্বাচিত সদস্যদের যা ক্ষমতা মনোনীত সদস্যদেরও মোটামুটি তাই ক্ষমতা। তাঁরা নানা ইস্যুতে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। কিন্তু এই সমালোচনায় তাঁদের অনেককেই জেরবার হতে হয় যে, এঁরা সভায় উপস্থিতি প্রায় থাকেনই না। এই প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক কালের নিরিখে নাম করা যেতে পারে, সচিন তেন্ডুলকর, রেখা, ব্যবসায়ী অনু আগা-র। যে ক্ষমতা নেই, তা হল-- মনোনীত সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না। উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাঁদের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।

কেন রাজ্যসভায় এই 'মনোনীত' ব্যবস্থা?

সংবিধানের খসড়া কমিটির সদস্য ছিলেন এস গোপালস্বামী আয়াঙ্গার। তিনি এ সম্পর্কে বলেছেন, নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষ যাঁরা, যাঁরা রাজনৈতিক লড়াইয়ের বাইরে, লোকসভায় পৌঁছানো হয় না যাঁদের, হতেই পারে তাঁরা নিজেদের শিক্ষাদীক্ষা দিয়ে বিতর্কে অংশ নিতে চাইছেন। সেই সুযোগই দেওয়া হচ্ছে এই ভাবে।… রাষ্ট্রপতির মনোনীত প্রথম ১২ জন সদস্য তাঁদের রাজ্যসভায় পাঠানোর ক্ষেত্রে মূল ভাবনা, মূল উদ্দেশ্য বা সাংবিধানিক মানসিকতা প্রায় পুরোমাত্রায় খাপ খেয়েছিল বলা যায়। এই তালিকায় জাকির হুসেন, যিনি পরে দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, ইতিহাসবিদ কালিদাস নাগ, রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, নামী হিন্দি কবি মৈথিলী শরণ গুপ্ত, গান্ধিবাদী লেখক কাকাসাহেব কালেলকর, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু, সমাজসেবী এন আর মালকানি, নৃত্যশিল্পী রুক্মিনী দেবী অরুন্ধলে, গান্ধিবাদী তাত্ত্বিক জে এম কুমারাপ্পা, বিচারপতি আল্লাদি কৃষ্ণস্বামী, অভিনেতা পৃথ্বীরাজ কাপুর এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানী মেজর জেনারেল এস এস সোখে।

১৯৫৩ সালের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু লোকসভায় বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভায় যাঁদের মনোনীত করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা বলাই যায় যে, বিশিষ্টতমদের মধ্যেই তাঁদের সকলের স্থান। শিল্প, বিজ্ঞান ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রের কথা বলছি। তাঁরা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন। কিন্তু সাহিত্য কিংবা শিল্প কিংবা সংস্কৃতি যে ক্ষেত্রই হোক না কেন, তাঁরা সেই সব ক্ষেত্রের সিলমোহরের মতো।

আরও পড়ুন- আতঙ্ক বাড়িয়ে ছড়াচ্ছে মাঙ্কিপক্স, আরও মৃত্যুর খবর শোনাল হু

মনোনয়নের রাজনীতিকরণ

উঁচু যে ভাবনা থেকে মনোনয়ন-ব্যবস্থাটি তৈরি করা হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ক্ষয় কার্যত লয় হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল তাদের নিজেদের লোককে রাজ্যসভায় মনোনয়নের মাধ্যমে পাঠিয়ে ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। এটাই যেন দস্তুর, এতে কেউ চিন্তিত বা চমৎকৃত হন না। ফলে মনোনীতদের টেকনিকালি কোনও পক্ষে থাকার কথা না থাকলেও, শাসকের পক্ষেই তাঁদের থাকতে দেখা যায়, এবং সেটাই তো স্বাভাবিক, তাই তো তাঁদের সংসদের উচ্চ কক্ষে পাঠানো হয়েছে! মনোনীত কোনও সদস্য কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারেন পদ অলংকৃত করার ছ' সপ্তাহের মধ্যে, ফলে সেই পথ ধরাটা তো মন্দ নয়। সব মিলিয়ে গাছের খাওয়া আর তলার কুড়োনো, এক সঙ্গে হলে মন্দ কি!

Read story in English

Rajya Sabha President of India PT Usha
Advertisment