ক্রমশ বাড়তে থাকা পেট্রোল-ডিজেলের দাম নিয়ে দেশের রাজনীতি মহলে জোর আলোচনা হচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরেই। অর্থনীতিবিদদের কপালের ভাঁজ বাড়ছে। কংগ্রেসের নেতৃত্বে ২৪ ঘণ্টার ভারত বন্ধও হয়েছে সোমবার। কিন্তু এই এত কিছুর মাঝে জ্বালানির দাম তো কিছু কমছেই না, বরং ক্রমশ বাড়তে থাকা দামের নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে রোজ। পেট্রোল-ডিজেলের ওপর আবগারি শুল্ক আপাতত কমাচ্ছে না কেন্দ্র। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং রাজস্থানে ২ এবং ৪ শতাংশ ভ্যাট কমানো হলেও বাকি রাজ্যে তেমন কিছুই হয়নি।
জ্বালানির ওপর শুল্ক কমানোয় কেন্দ্রের সমস্যা কতটা?
পেট্রোল-ডিজেলের ওপর বসানো শুল্ক থেকে রাজ্য এবং কেন্দ্র সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করে। ২০১৭-১৮ অর্থ বর্ষে কেন্দ্র পেট্রো পণ্যের ওপর বসানো আবগারি শুল্ক থেকে সংগ্রহ করেছিল ২.২৯ লক্ষ কোটি টাকা। পেট্রোল এবং ডিজেলের ওপর সরকারের বসানো আবগারি শুল্ক এখন যথাক্রমে লিটার পিছু ১৯.৪৮ টাকা এবং ১৫.৩৩ টাকা। ২০১৪-এর নভেম্বর থেকে ২০১৬-এর জানুয়ারির মধ্যে কেন্দ্র ন'বার আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছে। কমিয়েছে মাত্র একবার, গত বছর অক্টোবরে। তাও লিটার পিছু মাত্র ২ টাকা।
আরও পড়ুন, বন্ধের দিনেও বাড়ল পেট্রোল-ডিজেলের দাম
অপরিশোধিত তেলের ওপর বহিঃ শুল্ক না থাকলেও পেট্রোল এবং ডিজেলের ক্ষেত্রে ২.৫ শতাংশ বহিঃ শুল্ক থাকে। অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রে থাকে ২০ শতাংশ সেস এবং প্রতি মেট্রিক টন তেল পিছু ৫০ টাকা জাতীয় বিপর্যয় শুল্ক। আবগারি শুল্কের পরিমাণ সব রাজ্যে এক থাকলেও ভ্যাট একেক রাজ্যে একেক রকম হয়।
গত অর্থ বর্ষে ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেলস ট্যাক্স অথবা ভ্যাট সংগ্রহ করেছিল মহারাষ্ট্র -২৫,৬১১ কোটি টাকা। তালিকায় মহারাষ্ট্রের পরেই ছিল উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, গুজরাত, কর্ণাটক। যে সমস্ত রাজ্যে আর্থিক ঘাটতি বেশি ছিল, স্বভাবতই তারা সেই ঘাটতি পূরণের জন্য পেট্রোল এবং ডিজেলের ওপর তুলনামূলক বেশি সেলস ট্যাক্স বসিয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যায় আসামের কথা। ১২.৭ শতাংশ আর্থিক ঘাটতি পোষাতে পেট্রোলের ওপর ৩২.৬৬ শতাংশ অথবা লিটার পিছু ১৪ টাকা ভ্যাট বসিয়েছিল। আবার মহারাষ্ট্র কিংবা দিল্লির মত রাজ্য, যাদের আর্থিক ঘাটতি কম থাকা সত্তেও পেট্রোল ডিজেলের ওপর আগে থেকে বেশি কর বসিয়েছিল, তাদের পরবর্তী কালে শুল্কের পরিমাণ কমানোর সুযোগ ছিল।
পেট্রোল ডিজেলের ওপর জিএসটি বসালে কতটা পালটাবে পরিস্থিতি?
এলপিজি, কেরোসিন, লাইট ডিজেল জিএসটির আওতায় পড়লেও পেট্রোল, ডিজেল, অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এখনও জিএসটি বা পণ্য পরিষেবা করের আওতায় আসেনি। ভারতীয় সংবিধানের ১০১ তম সংশোধন কিন্তু এসব পণ্যকে জিএসটিভুক্ত করার অধিকার দিয়েছে। তবে কবে এদের জিএসটি ভুক্ত করা হবে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী খোলসা করে কিছু জানাননি। বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী, যিনি নিজে জিএসটি কাউন্সিলের সদস্য, বলেছেন এ সব পণ্য জিএসটির আওতায় আনলেও পরিস্থিতি খুব কিছু বদলাবে না। রাজস্বের পরিমাণ বাড়াতে সেক্ষেত্রে রাজ্যগুলো অতিরিক্ত কর বসাবে।
সরকার যদি পেট্রোল ডিজেলের ওপর শুল্ক কমিয়ে দিতে পারে, আর্থিক ঘাটতির সমাধান হয়ে যাবে?
একেবারেই না। শুল্ক কমিয়ে দিলেও কেন্দ্রকে অনেক বোঝা বইতেই হবে। কারণ পেট্রোল ডিজেল, এলপিজির দাম সবটাই বাজার নির্ভর নয়। সমাজের দুর্বল শ্রেণিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এলপিজি এবং কেরসিনের ক্ষেত্রে সরকার অনেকটাই ভর্তুকি দিয়ে থাকে। অর্থাৎ সরকার বিদেশ থেকে যে দামে তেল কিনছে, দেশের মানুষ কেন্দ্রের কাছে তা পাচ্ছে অনেক কম দামে। এই যে দুটো দামের ফারাক, সেই অর্থ কিন্তু বইতে হচ্ছে সরকারকেই। পেট্রোল ডিজেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে, পাশাপাশি মার্কিন ডলার পিছু ভারতীয় টাকার দাম কমছে। অর্থাৎ দু'দিক থেকেই সরকারের ওপর বোঝা বেড়েই চলেছে।