করোনা আবহের মধ্যেই আমেরিকা, ব্রিটেন, বেলজিয়াম সহ ইউরোপের একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মাঙ্কিপক্স। নতুন রোগের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দ্রুত। যদিও এই রোগের সংক্রমণে এখনও কারোর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
কাজেই সেই দিক থেকে ভয়ের কিছু নেই। তবে সংক্রামক রোগ হওয়ায় একটা ভয় তো রয়েইছে। সেকারণে সব দেশই বিমান যাত্রীদের উপরে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। এদিকে আবার জুন মাসেই নাকি করোনা সংক্রমণ দেশে চতুর্থ ওয়েভ নিয়ে আসবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। মাত্র এক মাস আগেও আমাদের কাছে এই রোগ সম্পর্কে কোন তথ্য ছিল না। এখন দাবানলের মতই ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স।
কেবল ইউরোপীয় দেশগুলিতেই নয়, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ভারতেও জারি করা হয়েছে কঠোর সতর্কতা। বিদেশ ফেরত যাত্রীদের ওপর বিমানবন্দরেই বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। ইতিমধ্যেই দুবাইতেও মিলেছে আক্রান্তের হদিশ।
এমন পরিস্থিতিতে এই রোগটি কীভাবে ছড়ায় এবং এটি কতটা বিপজ্জনক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ডেইলি মেইলের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ আমেশ অ্যাডালজা বলেছেন এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি চার সপ্তাহ পর্যন্ত ভাইরাসটি অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারেন।
ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল হেলথের আরেকজন বিশেষজ্ঞ মাইকেল হেডও অ্যাডালজার এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন, এই ত্বকের ক্ষত পুরোপুরি সেরে না ওঠা পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তি এই ভাইরাস ছড়াতে পারেন। ১৯৫৮ সালে প্রথম ল্যাবরেটরিতে বানরের মধ্যে এই ভাইরাসের সন্ধান মিলেছিল। সেই থেকেই এর নাম মাঙ্কিপক্স
প্রতিদিনই এই পরিসংখ্যান বৃদ্ধির ওপর নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মঙ্গলবার আর উদ্বেগ চেপে রাখতে পারল না ‘হু’। আফ্রিকা বাদে অন্যান্য মহাদেশেও মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ডব্লিউএইচও বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, আফ্রিকার বাইরে অন্যান্য মহাদেশে মাঙ্কিপক্স-এর ১৩১টি ঘটনা ধরা পড়েছে। এগুলো যে মাঙ্কিপক্সই, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এছাড়াও মাঙ্কিপক্সের আরও ১০৬টি ঘটনা ধরা পড়েছে। তবে, সেগুলো সন্দেহের তালিকায় আছে। যার অর্থ, সেগুলোও যে মাঙ্কিপক্সই, সেটা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
তবে, প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে হু কর্তাদের অনুমান, তাঁদের আশঙ্কাই সত্যি! সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা যে রীতিমতো উদ্বেগজনক, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ, মাত্র ১৫ দিন পেরিয়েছে। ৭ মে, আফ্রিকার বাইরের মহাদেশগুলোয় প্রথম মাঙ্কিপক্স ধরা পড়ে। তারপর ২৪ মে-এর মধ্যেই সেটা বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
আর, সবচেয়ে বড় কথা শুধু বিভিন্ন দেশই নয়। এই দেশগুলো আবার বিভিন্ন মহাদেশের অধীনে। তার মানে, সেই সব মহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়েছে। যেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এখনও নজরে আসেনি। আর, সেটা হলে যে মারাত্মক ব্যাপার, সেই ব্যাপারটাই ভাবাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষকর্তাদের। তবে এই রোগ কোভিড ১৯ এর মত ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা।
১৯৭০ এর দশকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে রেকর্ড করা হয়েছিল। পশ্চিম আফ্রিকায় গত এক দশকে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে। উপসর্গ সম্পর্কে সিডিএসের তরফে বলা হয়েছে মাঙ্কিপক্স আক্রান্তদের মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা এবং ফুসকুড়ি, র্যাশের মত উপসর্গ দেখতে পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুন: টেক্সাসের স্কুলে বন্দুকবাজের হামলা, নিহত ১৯ শিশু-সহ ২১ জন
মুখ থেকে শুরু হয়ে শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ছে এই র্যাশ। ম্যাসাচুসেটস স্বাস্থ্য দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে সহজে মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই বিরল। এই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে কোনও মাঙ্কিপক্সের ঘটনা ঘটেনি বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে। সিডিসি আরও বলেছে যে এটি গত দুই সপ্তাহের মধ্যে পর্তুগাল, স্পেন এবং যুক্তরাজ্য সহ বেশ কয়েকটি দেশে রিপোর্ট করা মাঙ্কিপক্সের একাধিক ঘটনার ওপর কড়া নজর রাখছে। জানা যাচ্ছে, সমকামী পুরুষদের মধ্যে এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাস (Monkey Pox Virus) দ্রুতহারে ছড়িয়ে পড়ছে।
পাশাপাশি, মাঙ্কিপক্সের হাত থেকে নিস্তার পেতে কোনও প্রকার ভ্যাকসিন কার্যকরী হবে, তা জানতেও নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। মূলত ইঁদুর থেকেই এই ভাইরাস ছড়ায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছিল। তবে মূল চিন্তার বিষয় একজন আক্রান্তের থেকে মাঙ্কিপক্স অন্য ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মাঙ্কিপক্সের থেকে স্মলপক্স অনেকটাই আলাদা। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তদের দেহে বড়বড় ফোস্কা পড়ে। এই উপসর্গ স্মল পক্সের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। তবে মাঙ্কিপক্স যে নতুন করে একাধিক দেশে আতঙ্ক সৃষ্ট করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে মাঙ্কিপক্স ছড়াতে পারে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসনালি, চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে। সংক্রমিত বাঁদর, ইঁদুর ও কাঠবিড়াল এবং ভাইরাসযুক্ত বস্তু যেমন বিছানাপত্র ও জামাকাপড়ের সংস্পর্শে এলেও ছড়াতে পারে ভাইরাসটি।