স্যালনে চুল ধোয়ার পরেই ‘বিউটি পার্লার স্ট্রোক সিনড্রোম’-এর লক্ষণ বছর পঞ্চাশের মহিলার শরীরে। সম্প্রতি, হায়দ্রাবাদের এক নিউরোলজিস্ট এমনই এক মহিলার চিকিৎসা করেছেন। ওই চিকিৎসক মহিলার শারীরিক সমস্যাটিকে 'বিউটি পার্লার স্ট্রোক সিনড্রোম'-এর লক্ষণ বলছেন।
হায়দ্রবাদের ওই চিকিৎসক ডাঃ সুধীর কুমারের মতে, ওই মহিলার মাথা ঘোরা, বমি-বমি ভাব এবং বমি হওয়ার লক্ষণগুলি দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসক বলেন, ''ওই মহিলা একটি বিউটি পার্লারে গিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়েছিলেন। তারপর থেকেই ওঁর শরীরে এই লক্ষ্ণণগুলি দেখা যাচ্ছে।'' প্রথমে ওই মহিলাকে একজন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যিনি তাঁর চিকিত্সা করেছিলেন। ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসায় মহিলার শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। পরের দিন তিনি হাঁটার সময় হালকা ভারসাম্যহীনতার সমস্যায় পড়েছিলেন।
বর্তমানে হায়দ্রাবাদের নিউরোলজিস্ট ডাঃ সুধীর কুমারের কাছে চিকিৎসা করাচ্ছেন ওই মহিলা। ডা সুধীর কুমার বলেন, “আমার মতামতের জন্য তাঁকে রেফার করা হয়েছিল। তাঁর হালকা রাইট সেরিবেলার লক্ষ্মণ ছিল। মহিলার লক্ষ্মণগুলি দেখে বিউটি পার্লার স্ট্রোক সিন্ড্রোমের নির্ণয় করা হয়। মেরুদণ্ডের ধমনীতে কিঙ্কিং করা এবং শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার সময় ও ঘাড় ধোয়ার জন্য বেসিনের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অনেকের সমস্যা হতে পারে। তবে ওই মহিলার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ছিল।''
ডাঃ কুমারের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিউটি পার্লারে শ্যাম্পু চুল ধোয়ার সময় বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে যেসব মহিলাদের ভার্টিব্রাল হাইপোপ্লাসিয়া (মেরুদণ্ডের ধমনীতে একটি অস্বাভাবিকতা) রয়েছে তাঁদের জন্য এটি ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এই সব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।''
আরও পড়ুন- মোরবির ব্রিজ বিপর্যয়ে মৃত বেড়ে ১৩৫, দুর্ঘটনাস্থলে প্রধানমন্ত্রী, কথা আহতদের সঙ্গে
সহজ কথায়, ভার্টিব্রাল হাইপোপ্লাসিয়া (মেরুদণ্ডের ধমনীতে একটি অস্বাভাবিকতা) থাকলে এক মহিলার পিআইসিএ এলাকায় স্ট্রোক হতে পারে। ডাঃ কুমার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডটকমকে বলেন, ''যে ১০-২০ শতাংশের মধ্যে, ধমনীর এক পাশ পাতলা হতে পারে যা অন্য পুরু ধমনীতে কোনও ধরনের হাইপার এক্সটেনশন হলেই সঙ্গে সঙ্গে সংকুচিত হয়ে যায়। এর ফলে স্ট্রোক হতে পারে। এই বিশেষ ক্ষেত্রে, মহিলার বাম পাশের ধমনীটি পাতলা ছিল। সুতরাং, যখন তাঁর ঘাড়টি ডানদিকে সামান্য কাত হয়েছিল, তখন এটি হাইপারএক্সটেনশনের সঙ্গে সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। সেই প্রবণতাই মহিলাকে স্ট্রোকের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।'' ডাঃ কুমার আরও জানিয়েছেন, তিনি আরও দুটি এমন গুরুতর কেস দেখেছেন। এছাড়াও হালকা লক্ষ্মণ-সহ কমপক্ষে ১২টিরও বেশি এমন কেস দেখেছেন তিনি।
আরও পড়ুন- ব্রিটিশ আমলের মোরবি ব্রিজ, একসঙ্গে ১৫ জনের ওঠার অনুমতি ছিল, বলছে পুরনথিই
ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই মহিলার ক্ষেত্রে স্ট্রোক থেকে সেরে উঠতে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে। তিনি বলেন "সোশ্যাল মিডিয়া সহ অন্য মাধ্যমেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।"
ওখার্ড হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ও স্ট্রোক স্পেশালিস্ট চিকিৎসক পাই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডট কমকে বলেন, ''মাথা ঘোরা, বমি ভাব তখই হয় যখন কেউ ঝাঁকুনি দিয়ে ঘাড় ও মাথা মোচড়াতে থাকেন। একটি শব্দও হয়। শরীরের এই ধরনের ঝাঁকুনির জেরে নরম পেশীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে - ফলে স্ট্রোক হয়। এটিকে চিকিৎসার পরিভাষায় ভার্টিব্রাল আর্টারি ডিসেকশন বলা হয়।''