গত কয়েকমাস ধরে বঙ্গজীবনে চর্চায় রয়েছেন তিনি। কলেজের চৌহদ্দি পেরিয়ে ‘বন্ধু’ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে তিনি রাজনীতির দুনিয়ায় পা রেখেছেন। সেখানেও তাঁকে ঘিরে নানা জটিলতা, বিতর্ক, সমালোচনা। এই যাত্রাপথেই কখনও ‘হেনস্থা’র শিকার হয়ে সাংবাদিক বৈঠকে কেঁদে ফেলেছেন। আবার কখনও তোপ দেগেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। কিন্তু যত ঝড়ই বয়ে যাক, বরাবরই নিজেকে ‘প্রেজেন্টেবল’ রেখেছেন তিনি। তাঁর শাড়ি, প্রসাধনী, অলঙ্কার রীতিমতো বাঙালির ড্রয়িংরুমে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু তিনি সেসবকে গুরুত্ব না দিয়ে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর এখন শারদীয় আমেজে আর পাঁচজন বঙ্গনারীর মতো তিনিও মেতে উঠেছেন বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসবের আবহে। কিন্তু এবার তাঁর পুজো যাপনের পরিকল্পনা ঠিক কী? নতুন শাড়িই বা ক’টি হল? ‘বন্ধু’ শোভন কী উপহার দিলেন? আর তিনি অর্থাৎ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এবার স্বামী-কন্যা-বন্ধুকে কী উপহার দিচ্ছেন-এসব নিয়েই মনখোলা আড্ডা দিলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে।
পুজোর প্ল্যান
পুজোয় কোনও বছরই প্ল্যানট্যান করি না। পুজো মানেই নতুন শাড়ি, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, বাইরে খাওয়া-দাওয়া। তবে মায়ের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করি। আমার মা বাইরে বেরোতে পারেন না। তাই রোজ মায়ের কাছে যাই। মা নতুন শাড়িতে আমাকে দেখতে ভালবাসেন। যেখানেই ঘুরি না কেন, মায়ের সঙ্গে দেখা করাটা মাস্ট। কারণ, ওটাই আমার কাছে ঈশ্বরদর্শন। এ বছর ষষ্ঠীতে আমার কমপ্লেক্সের পুজোয় একটা অনুষ্ঠানে আমার মেয়ে (মহুল) নাচবে, এজন্য ও খুবই উত্তেজিত। তাই ওইদিন ওকে নিয়েই থাকব। আমার সেভাবে ঠাকুর দেখা হয় না। কারণ ভিড় আমি খুব ভয় পাই। আগে উদ্বোধন করতে বা বিচারক হিসেবে যেতাম, তখনই ঠাকুর দেখা হত। তবে গত ২ বছর আর বিচারক হিসেবে অংশ নিচ্ছি না। আসলে এতে অনেকটা সময় চলে যায়।
আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে রাজীব কুমার, দেখে চেনাই দুষ্কর
মেয়ে বায়না করে না ঠাকুর দেখার জন্য?
ও খুব বুঝদার, ওকে বুঝিয়ে বললে শোনে। অনেকসময় ওর বাবার কাছে বায়না করে। ভিড়ের জায়গা হলে মনোজিৎই সামলায়। তবে আমি যেমন ঘরমুখী, আমার মেয়েও তাই। ছোটোবেলায় আমি পাড়ার পুজো ছাড়া বাইরে যেতাম না। প্রথমবার কলেজে উঠে বাইরে ঠাকুর দেখার অনুমতি পাই। আসলে আমার বাড়ি বরাবরই রক্ষণশীল ঘরানার।
আরও পড়ুন: বৈশাখীর দরজায় দড়াম দড়াম আওয়াজ, ‘চরম হেনস্থা-গালিগালাজ’
আরও পড়ুন: বিজেপি-তে গিয়ে কেউ যা পায়নি, তাই পেলেন সব্যসাচী
পুজো মানেই শাড়ি
পুজো মানেই আমার কাছে নতুন শাড়ি। আমিই সবার জন্য কেনাকাটা করি। ছোটোবলা থেকেই তিন বেলা নতুন জামাকাপড় পরা রীতি আমাদের। এখন তিন বেলা না হলেও দু’বেলা অন্তত নতুন শাড়ি পরি। প্রচুর মানুষকে আমি যেমন উপহার দিই, ওঁরাও আমাকে উপহার দেন। বাপের বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি ছাড়াও আমার আরেকটা পরিবার রয়েছে, সেটা হল আমার কলেজ। কলেজে যিনি জল দেন, তাঁকেও আমি উপহার দিই। তাঁরাও আমায় উপহার দেন। জানো, ছোটোবেলায় আমাদের তিন বোনকে বাবা প্রচুর টাকা দিতেন। সেই টাকায় তখন নিজের জন্যই কিনতাম। পরে যখন চাকরি পেলাম, তখন সবাইকে দিতে শুরু করি। খুব ভাল লাগে সবাইকে উপহার দিতে। আমায় অনেকে শাড়ি দেন। এখনও মা আমায় পুজোয় টাকা দেন। যতদূর মনে হচ্ছে, প্রায় দেড়শোরও বেশি শাড়ি পেয়েছি এবার। এখন থেকে ঠিক করে রেখেছি, কবে কোন শাড়ি পরব। এর মধ্যে আমার নিজের কেনা শাড়ি একটা। সকলের কাছ থেকে পাওয়া উপহার আসলে আমার কাছে ভালবাসা, আশীর্বাদের প্রতীক। পয়লা বৈশাখ আর পুজো, এই দু’বার সবাইকে উপহার দিই।
EXCLUSIVE শোভন: মমতাকে তৈরি করতে সব নষ্ট করে জীবন দিয়েছিলাম, আর উনিই রাজনীতি করলেন
মায়ের সঙ্গে মেয়ের কম্পিটিশন হয়, কার ক’টা নতুন জামা হল?
হাসতে হাসতে বৈশাখী বললেন, ‘‘ও (মেয়ে) আমার মায়ের কাছে এখন অভিযোগ করে যে মা এত নতুন জামা কিনে দেয়, কখন যে পরব! সেজন্য ও মহালয়া থেকে নতুন জামা পরা শুরু করেছে। কী জানো, পয়লা বৈশাখ ও পুজো মিলিয়ে বছরে আমার ৩৬৫টিরও বেশি শাড়ি হয়। সুতরাং সারা বছরই নতুন শাড়ি পরে থাকি (উল্লেখ্য, বৈশাখীর শাড়ির বাহার সম্প্রতি বঙ্গজীবনের চর্চার অঙ্গ)। আমার মেয়েও খুব শাড়ি পরতে ভালবাসে। একবার এক অনুষ্ঠানে পার্থদা (শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়) আমার মেয়েকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখে এত মজা পেয়েছিলেন, যে ছবি তুলেছিলেন। উনি সেই ছবি পাঠিয়েওছিলেন।
বৈশাখীকে শোভনের উপহার
এবছর ও (শোভন) আমায় একটা শাড়ি দিয়েছে।
শোভনকে বৈশাখীর উপহার
শোভনদা নিজের জন্য খুব একটা কিছু কেনেন না। আমি মা, মনোজিৎ, মেয়ের জন্য আমার পছন্দমতো জামাকাপড় কিনেছি। আর উনি (শোভন) যা পছন্দ করেন, সেই মতোই কিনেছি। শোভনদা কখন কোনটা পরবেন, তা সাজিয়ে রাখি। তবে তার মধ্যে পুরোটা ওঁর পরা হয়ে ওঠে না। আর না পরলেই রাগারাগি হয়, মন কষাকষি হয়।
আরও পড়ুন: ‘গণশক্তি পড়ে জেনেছিলাম, বাবা রাজ্য সম্পাদক হয়েছেন’
বৈশাখীর স্টাইল স্টেটমেন্ট
সাজটা আমার নিজের জন্য। নিজেকে ভালবেসে সাজা, অন্য কে কী ভাবল, সেজন্য নয়। সেটা তাঁদের ব্যাপার। হ্যাঁ, এটা বুঝি, আমার স্টাইল স্টেটমেন্ট অনেকের ভাল লাগে। আমি যখন প্রেসিডেন্সিতে শাড়ি পরা শুরু করি, তখন আমিই কলেজে একমাত্র ছিলাম যে শাড়ি পরে ওই কলেজে যেত। শাড়ির মাধ্যমেও স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করা যায়। আমার মধ্যে যে দীপ্তি, তা যেন আমার ব্যবহার, কথার মধ্যেও প্রকাশ পায়। কোনওকিছু ফ্যাশনেবল বলেই যে সেটা পরতে হবে তেমনটা মনে করি না। কাউকে দেখে আমি স্টাইল সেট করি না। আমি বরাবরই সনাতনি সাজে সাজতে ভালবাসি।
EXCLUSIVE: দেবশ্রী: মমতার সঙ্গে কেন কথা বলব? বিজেপিতে যোগ দিতে যাইনি
বৈশাখীর ধুনুচি নাচ
একবার হয়েছিল কী, আমার কমপ্লেক্সে সকলে মিলে জোর করে ধুনুচি নাচে অংশ নিতে বলেন। কিন্তু আমি তো কাটানোর চেষ্টা করছি। তারপর একটা সময় এমন সকলে জোর করল যে করতেই হল। সকলে ভেবেছিল যে আমি পারব না। তারপর ১ ঘণ্টা এমন ধুনুচি নাচলাম, যে সকলে হাঁ হয়ে গেল। আসলে কেউ জানত না যে আমি ভাল নাচও জানি।
বৈশাখীর সিঁদুর খেলা
সিঁদুর খেলা আমার কাছে খুব প্রাণের। একটা সময় দূরদর্শনের অ্যাঙ্কর ছিলাম। আমি সিঁদুর খেলা কভার করতে যেতাম তখন। প্রথম প্যান্ডেলে গিয়ে সিঁদুর খেলতে বারণ করতেন ডিরেক্টর। তারপর শেষ যে প্যান্ডেলে কভার করতে যেতাম সেখানেই সিঁদুর খেলতাম। অষ্টমীর অঞ্জলিও দিই। নবমীর সন্ধিপুজোও খুব ভাল লাগে আমার।