কাঁদতে কাঁদতে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। নাকচ করে দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাবও। ৫ মাস পার। আবারও ইস্তফা দিলেন তিনি। আবারও তাঁকে পদত্যাগ না করে সমস্যা সুরাহার প্রস্তাব দিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তাহলে কি আবারও নাকচ হতে চলেছে তাঁর পদত্যাগপত্র? মিল্লি আল আমিন কলেজের অধ্যক্ষর পদ থেকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা ঘিরে আবারও সরগরম রাজ্যের শিক্ষামহল। কলেজের সমস্যার জট না খোলায় বৃহস্পতিবার ফের ইস্তফা দেন ‘ক্লান্ত’ বৈশাখী। এমনকী, শুধু কলেজ নয়, ‘শিক্ষা ব্যবস্থা’ থেকে অব্যাহতি চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান শোভন বান্ধবী। এরপরই বৃহস্পতিবার রাতে ফোন করে বৈশাখীকে আবারও আশ্বস্ত করেন পার্থ, দাবি বৈশাখীর। শুধু তাই নয়, বৈশাখীকে কার্যত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তাও দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব। এরপরই বৈশাখীর ইস্তফা-পর্ব আবারও নয়া মোড় নিয়েছে।
বৈশাখীকে ফোন পার্থর, কী কথা হল?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে অধ্যাপিকা তথা শোভন-বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উনি (পার্থ) ফোন করেছিলেন। উনি পদত্যাগ করতে বারণ করেন। আমি বললাম, স্যার আর কতদিন এভাবে চলবে! উনি বলেন, তুমি আছ বলেই লড়াইটা করতে পারছ। অন্য কেউ হলে পারবে না। আমি দেখছি। আমি বললাম, স্যার আমি ইস্তফা দিচ্ছি, গ্রহণ করলে জানাবেন। না গ্রহণ করলেও জানাবেন’’।
আরও পড়ুন: ‘কোনওরকমে প্রাণ নিয়ে ফিরেছি’, মুকুলের গলায় আতঙ্কের সুর
উল্লেখ্য, অগাস্ট মাসে যখন ইস্তফা দিয়েছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়, সে সময় তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সে সময় বৈশাখীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি পার্থ। এ প্রসঙ্গে বৈশাখী আরও বলেন, ‘‘উনি তো আশ্বস্ত করছেন। কিন্তু অগাস্ট থেকে ডিসেম্বর হয়ে গেল, কলেজের জট খোলার কোনও ইঙ্গিতই নেই। পার্থদা তো নিজে এসে এই কলেজ চালাতে পারবেন না। অনুসন্ধানের রিপোর্টও এখনও আসেনি’’।
আরও পড়ুন: বাংলায় বিজেপির মনোবল তলানিতে? মুকুল-পুত্র-সব্যসাচীর সাংবাদিক বৈঠক ঘিরে প্রশ্ন
দ্বিতীয়বার ইস্তফা প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে অধ্যাপিকা বৈশাখী বলেন, ‘‘ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। কাজের পরিবেশ নেই। কলেজে কোনও শৃঙ্খলারক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ (ডিসিপ্লিনারি অথিরিটি) নেই, কীভাবে চলবে! তাই ইস্তফা দিলাম। কারণ, আমার জন্য যদি কলেজে এত সমস্যা হয়, তাহলে আমার সরে দাঁড়ানই ভাল। আমার নৈতিকতায় বাধছে, আমার মনে হচ্ছে, আমাকে সরানোই যদি মূল উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তাহলে আমার জন্য কলেজকে কেন মারবে!’’।
উল্লেখ্য, অগাস্ট মাসে ইস্তফা দেওয়ার বেশ কিছুদিন পর পুজোর আগে কলেজে গিয়েছিলেন বৈশাখী। সেদিন মিল্লি আল আমিন কলেজে বৈশাখীকে ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে। মিল্লি আল আমিন কলেজের অধ্যক্ষা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হেনস্থার অভিযোগ ওঠে কলেজেরই এক অধ্যাপিকা সাবিনা নিশাত ওমারের বিরুদ্ধে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন সাবিনা। প্রসঙ্গত, গত অগাস্টে চাকরিতে ইস্তফার সিদ্ধান্তের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করেছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পাশে বসে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বৈশাখী বলেছিলেন, ‘‘দিদিকেই বলতে চাই। আপনি কি সত্যিই নির্দেশ দিয়েছেন যে, সাম্প্রদায়িক তকমা দিয়ে চাকরি খেয়ে নেবেন! নাকি আপনার নাম করে অন্য কেউ এসব বলছেন’’।