বাংলার রাজনীতির আকাশে নক্ষত্র পতন। প্রয়াত হলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কালীপুজোর রাতেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলার রাজনীতির অন্যতম রঙিন চরিত্র। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
গত ২৪ অক্টোবর রবিবার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করার পর সুব্রতবাবুকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সুব্রতবাবুর শ্বাসকষ্ট বাড়ায় আইসিসিইউ-তে দেওয়া হয় তাঁকে। উডবার্ন ইউনিটে ভর্তি ছিলেন তিনি। কিন্তু গত কয়েকদিন অবস্থার অবনতি হয়। তবে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছিলেন তিনি। আগামিকালই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস! আজ, শৌচাগারে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তাঁর প্রয়াণে বাংলার রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মহলে শোকের ছায়া নেমেছে।
এদিন বাড়ির কালীপুজো ফেলে এসএসকেএম হাসপাতালে ছুটে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালে সুব্রতবাবুর মৃত্যুর খবরে শোকে ভেঙে পড়েন মমতা। রাজ্যের পঞ্চায়েতও গ্রামোন্নয়ন-সহ চারটি দফতরের মন্ত্রী ছিলেন সুব্রতবাবু। কলকাতার মেয়র পদও অলঙ্কৃত করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন- সবাই আছে, শুধু ‘কালী’-ই নেই! প্রয়াত মেজো ভাইয়ের ছবি রেখে কালীপুজো মমতার
ছয়ের দশকে বাংলার কংগ্রেসি রাজনীতিতে ছাত্রবয়সে উত্থান হয় সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় ঢোকেন সুব্রত। জরুরি অবস্থার সময় তিনি ছিলেন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী। ২০০০ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ বছর পর্যন্ত তিনি কলকাতা পুরসভার মেয়র ছিলেন।
মেয়র পদে থাকার শেষদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় তাঁর। তিনি নিজের আলাদা মঞ্চ তৈরি করে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে পুরভোটে লড়েন। তিনি জিতলেও হেরে যায় তাঁর দল। এরপর ফের কংগ্রেসে ফেরেন তিনি। তাঁকে কার্যনির্বাহী প্রদেশ সভাপতি করা হয়। কিন্তু ২০১০ সালে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন হয় তাঁর। সেই থেকে তৃণমূলেই ছিলেন। ২০১১ সালে পালাবদলের সময় থেকে মমতার মন্ত্রিসভায় ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন- ইন্দিরার স্নেহধন্য, সিদ্ধার্থের প্রিয়পাত্র, মমতার শ্রদ্ধেও- একনজরে বর্ণময় সুব্রত
এদিন হাসপাতালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুঃখে ভেঙে পড়ে বলেন, "আমার জীবনে অনেক দুর্যোগ দেখেছি। কিন্তু সুব্রতদার মৃত্যু অনেক বড় দুর্যোগ। এমন আলোর দিনে অন্ধকার নেমে আসবে ভাবতেও পারিনি। সুব্রতদার মরদেহ দেখতে পারব না। সুব্রতদার মতো হাসিখুশি, কর্মঠ মানুষ কমই দেখেছি। হার্টের অসুখটা এমন যে সময়ে থাকতে দেখিয়ে নিতে হয় অবহেলা না করে। এ দুঃখ নিতে পারছি না।" রাজনীতি দূরে রেখে এদিন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করে টুইট করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
সুরসিক, সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক তো বটেই, দুর্গাপুজো অন্ত প্রাণ ছিলেন সুব্রত। রাজনীতির বাইরে প্রেম বলতে দুর্গাপুজো। একডালিয়া এভারগ্রিন পুজোয় সঙ্গে আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন। এবারেও পুজোর সময় একডালিয়া নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। পুজোর পর হাসপাতালে ভর্তি হলেন। আর ফিরলেন না এত হাসিখুশি, রসিক মানুষটা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন