কীভাবে আয়োজন করবেন ছটপুজো, ভেবেই পাচ্ছেন না ঘরছাড়া মানুষগুলো
বউবাজার চত্বরে ভুগর্ভে মেট্রোরেলের কাজকে ঘিরে ফের ভয়ঙ্কর দিন ফিরল। উনিশেও একই ভাবে পুরনো বাড়িতে ফাটল ধরে, সেই স্মৃতি আজও তাজা। তারই মাঝে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি, পাড়ার মানুষজনের এখন দুর্বিষহ অবস্থা। পুলিশি পাহারা গোটা এলাকায়। রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। এলাকার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিকটবর্তী একটা হোটেলে। ভিটেমাটি ছেড়ে কেমন আছেন তাঁরা? এই ঘটনায় একরকম বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। হোটেলের চার দেওয়ালে চিন্তায় দিন কাটছে তাঁদের।
Advertisment
নিকটবর্তী রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের কাছেই হোটেল Q-Inn, সেখানেই স্থানাতরিত করা হয়েছে সকলকে। বউবাজারের সেই এলাকার এক বাসিন্দা, কাঞ্চন জয়সওয়াল বলছেন, "এই নিয়ে দ্বিতীয়বার, আগেরবার তাও কিছু বেঁচে ছিল এবার সবই মোটামুটি ধ্বংসের পর্যায়ে। বুধবার রাত নটা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে, আমরা তখন ভয়ে কাঁপছি। পুলিশ আসে, আমাদের রাত ২:৩০টে নাগাদ এই হোটেলে স্থানান্তরিত করা হয়।"
এই হোটেলেই রয়েছেন অনেকে।
বেরনোর সময় বাড়িয়ে অবস্থা কেমন দেখেছেন? উত্তরে তিনি বলেন, "আমার দিকটা একটু কম ক্ষতিগ্রস্ত। তবে আমার দেওরের বাড়ি একেবারেই শেষ। বাড়িতে সব জিনিসপত্র রয়েছে। পুলিশ এসে বলে, সব জিনিস বের করে ঘর খালি করে দিন। কোথায় রাখব? আমরাও বলেছি আগে থাকার ব্যবস্থা করে দিন, ঘর খুঁজে দিন তারপরেই জিনিস বের করব"। দুই রাত ধরে একদমই ঘুম নেই তাঁদের চোখে। শুধুই নিজের বাসস্থানের চিন্তা। হোটেলে কি আর থাকা যায়! কাঞ্চন বলেন, "আমার ছেলে অনেকবার গিয়েছিল সব পরিস্থিতি জানতে, রবিবারের আগে কিছু জানা যাবে না। সেদিনই ওঁরা বলবে আমরা কোথায় যাব, কীভাবে থাকব।"
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়েই এক কামরার একটি ঘরে থাকতে নাজেহাল অবস্থা তাঁদের। সঙ্গে দুটি ছোট বাচ্চা। তার মধ্যেই এত খরচ! কাঞ্চনের ছেলে নীতেশ বলেন, "বাড়ি সারানোর খরচ এবং এই হোটেলের যাবতীয় খরচ সবই মেট্রোরেল দেবে। আমরা সাধারণ মানুষ, ব্যবসা করে চলে। গতকালই সমস্ত প্রমাণ দেখাতে হয়েছে, আদৌ আমরা এই এলাকার বাসিন্দা কিনা, কতদিন ধরে রয়েছি এই সংক্রান্ত।" তাঁদের একটাই বক্তব্য, "আমাদের ঘর করে দিলেই আমরা খুশি। এখানে এইভাবে থাকা যায় না, খাওয়া-দাওয়ার বড্ড সমস্যা। হোটেল থেকে দেওয়া হলেও বাড়ির খাবার তো অন্য জিনিস। পাড়ার সবাই এসেছেন কিনা জানি না তবে আমাদের দিকের সকলেই এসেছেন। এখন দেখা যাক!"
হোটেল Q-Inn এই রয়েছেন সকলে। যদিও বা দুই রাতের ঘটনায় সকলে বেজায় ক্লান্ত। মন পড়ে রয়েছে বাড়ির দিকেই, বারবার যাতায়াত করছেন তারা। Q-Inn এর কর্ণধার পার্থ কুন্ডু বললেন, "গতবারও ওরা এখানেই এসেছিলেন। যেহেতু এই জায়গাটা কাছে, ওদের স্কুল কলেজ, আর্থিক রোজগার এই জায়গাকে ঘিরেই কোথায় যাবে বলুন? মেট্রো রেলের ক্ষমতা থাকলেও ওদের ইচ্ছে এই জায়গাতেই থাকার। গতবার তো তিন থেকে চার মাস ছিলেন কেউ কেউ! কিছুই না একটু বাড়িটা দেখতে যাওয়া যায়। কোনও সুরাহা হল কিনা সেই সম্পর্কে জানা যায়। যতদিন না কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে এখানেই থাকবেন, তারপর সরকারের তৎপরতায় যত তাড়াতাড়ি কাজ হয়।"